ঢাকা: রাজধানীতে মঙ্গলবার থেকে ১৫ পরিবহনের ৭১১টি বাসে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্তের কথা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। অতিরিক্ত বাসভাড়া, যাত্রী হয়রানিসহ একাধিক কারণে ই-টিকিটিং চালুর কথা জানালেও তা চালু হয়নি অধিকাংশ বাসে।
তবে বাসমালিক সমিতি জানিয়েছে, বাস মালিকেরা যদি ই-টিকিটিং চালু না করে তবে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়াসহ সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকাশ পরিবহন, ভিআইপি, তরঙ্গ প্লাস বাসে উঠে কোনোটিতেই এ প্রতিবেদক ই-টিকিটিং চালু হয়েছে দেখতে পাননি।
এ দিন থেকে মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ, স্বাধীন লাইন পরিবহন, দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মালঞ্চ পরিবহন লিমিটেড, তরঙ্গ প্লাস ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, আলিফ এন্টারপ্রাইজ (১), আলিফ এন্টারপ্রাইজ (২), অভিনন্দন ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, বিকাশ পরিবহন লিমিটেড, গাবতলী এক্সপ্রেস লিমিটেড, মেঘলা ট্রান্সপোর্ট কোং লিমিটেড, ভিআইপি অটো মোবাইলস লিমিটেড, রমজান আলী এন্টারপ্রাইজ, মিডলাইন পরিবহন লিমিটেড এবং স্বপ্ন পরিবহন লিমিটেডের বাসগুলোতে ই-টিকিটিং চালু হওয়ার কথা ছিল।
ভিআইপি পরিবহনের সহকারী মজিদ হোসেন বলেন, আমাদের বাসে কাল থেকে ই-টিকিটিং চালু হবে। অন্যদিকে বিকাশ পরিবহনের বাসগুলোতে এ দিনও রাস্তায় চেকার বসিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল।
এ নিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী ফুয়াদ হোসেন বলেন, ধানমন্ডি থেকে আমি খিলক্ষেতে আসি। এ রুটের দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের মতো। ২০ টাকা ভাড়া আসার কথা থাকলেও এরা চেকার বসিয়ে ৪০ টাকা ভাড়া নেয়।
বিকাশ পরিবহনের এমডি মোহাম্মদ হারুন বলেন, অনেক ড্রাইভার-হেলপার প্রশিক্ষিত নন। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ই-টিকিটিং চালু করতে ২-৩ দিন সময় লাগবে। আর শতভাগ ঠিক হতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যাবে।
বিকাশ পরিবহনের চেকার সিস্টেমের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বলেন, এ অভিযোগ ঠিক নয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা ভাড়া নেই।
বাংলানিউজের প্রতিবেদক নিজের অভিজ্ঞতা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আছে জানলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যা বলছে পরিবহন মালিক সমিতি
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ অতিরিক্ত ভাড়ার আদায়ের বিষয়ে সমাধান করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় পর গেটলক সার্ভিস, সিটিং সার্ভিস এগুলো বন্ধ করতে পেরেছি। অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধ করতেই ই-টিকিটিং আসছে।
অধিকাংশ বাসে ই-টিকিটিং চালু না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে মাঠে ছিলাম। কিছু কিছু অনিয়ম পেয়েছি। এসব অনিয়ম দূর করতে ২-৩ দিন সময় লাগবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ই-টিকিটিং চালু না করার অভিযোগে বিকাশ পরিবহনের এমডিকে তলব করা হয়েছে।
ই-টিকিটিং চালু করতে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে এই পরিবহন নেতা বলেন, বাস মালিকদের সাংগঠনিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হবে। কোনো বাস ই-টিকিটিং চালু না করলে সেই বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া, প্রশাসনের সঙ্গে বসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ১৫টি পরিবহনের ৭১১টি বাসে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর তথ্য জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রজাপতি পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, অছিম পরিবহন, নূর-ই মক্কা পরিবহন ও বসুমতির বাসে ই-টিকিটং ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানি ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
এনবি/এমজেএফ