চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জনরোষের শিকার হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ঢুকে স্থানীয় জনসাধারণ ও ভুক্তভোগীদের একাংশ তাকে মারধর করেন।
তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় ভূমি নিবন্ধনে আসা সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সন্ধ্যায় প্রশাসন আহত সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় চার মাস আগে শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকরা সাব রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন অনিয়ম, হয়রানি এবং দলিল আটকে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে দীর্ঘ তিন মাস কর্মবিরতি পালন করেন। দলিল লেখকদের অযথা হয়রানির অভিযোগসহ, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক বলেন, আমরা বাধ্য হই তার নানান অন্যায় আবদার মেটাতে। দলিল সম্পাদনে দাতা ও গ্রহীতার তথ্য ও কাগজপত্রে কোনো ভুল না থাকার পরও অতিরিক্ত টাকা না দিলে তিনি দলিল সম্পাদন করেন না। সম্প্রতি একজনের কাছ থেকেই ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিবগঞ্জে দিনে প্রায় দুই শতাধিক দলিল সম্পাদন হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী এ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা অন্যায়ভাবে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
শিবগঞ্জের জালমাছমারী এলাকার এক দলিল লেখক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক এক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর মারা যান। এরপর তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তানের অনুকূলে পেনশনের টাকার সুপারিশের জন্য শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর কাছে প্রায় ১৫ মাস ধরে ঘুরেও কোনো সুরাহা মেলেনি। উল্টো কাজ না করে হয়রানির অভিযোগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগীদের হামলায় শিকার হন ওই সাব রেজিস্ট্রার। পরে স্থানীয় অনেকেই হামলায় যোগ দিলে অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এ সময় তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলে স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন জনসাধারণকে শান্ত করে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। এ বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য মেলেনি।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিভিন্ন সেবা গ্রহীতা ও প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মবর্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বর মাসের আইন শৃঙ্খলা সভায় অনিয়ম, অসভ্যতা ও দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়ার পরও কয়েক দফা সর্তক করা হয়। এর পরেও তিনি তা কর্ণপাত না করায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের শান্ত করে এলাকা ত্যাগ করানো হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
আরএ