ময়মনসিংহ: বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় স্পোর্টসকার ‘ল্যাম্বরগিনি’। বাংলাদেশ এ গাড়ির চলাচলে অনুমোদন নেই।
টয়োটা কোম্পানির স্টারলেট মডেলের একটি পুরনো গাড়ি ভেঙে ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর মডেলের হলুদ রঙা গাড়ি তৈরি করেছেন আজিজ। তিনি নগরীর দিঘারকান্দা এলাকার শাহাদাৎ মোটরসের মেকানিক। থাকেন জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার ঝাকুনিপুর গ্রামে।
১৫ মাসের চেষ্টায় পনের লাখ টাকা ব্যয়ে হলুদ রঙের ১৫০০ সিসি গাড়িটি এখন ময়মনসিংহের সর্বমহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গাড়িটি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে বাংলানিউজ। এর হেডলাইট, টেললাইট, বডি ডিজাইন, সিটের গঠন সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের মতো। গাড়ির দরজাও অত্যাধুনিক।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপের সময় ল্যাম্বরগিনির আদলে বানানো গাড়িটি নিয়ে কথা বলেছেন আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, ছোট থেকেই আমি গাড়ির মেকানিজমের সঙ্গে জড়িত। ঢাকার উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় টানা ২১ বছর ওয়ার্কশপে কাজ করেছি। সেখানে আমার ওস্তাদ নজরুল ইসলামের কাছ থেকে গাড়ির কাজ শিখি। গত চার বছর ধরে দিঘারকান্দা এলাকার শাহাদাৎ মোটরসে কাজ করছি।
এখানে কাজ শুরু করার পর থেকেই উন্নত প্রযুক্তির স্পোর্টস কার তৈরির পরিকল্পনা করি। সেজন্য আমি তিন হাজার টাকায় ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর মডেলের একটি খেলনার স্পোর্টস কার কিনি। তারপর টানা তিন মাস দিন-রাত ইউটিউবে ভারত ও ইন্দোনিশিয়ায় তৈরি হওয়া এ গাড়ির নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ধারণা নিই।
আজিজ বলেন, প্রথমদিকে এসব কাজ শুরু করায় অনেকেই আমাকে উপহাস ও হতাশ করেছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। আমার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি টয়োটা স্টারলেট মডেলের গাড়ি কিনে প্রথমে সম্পূর্ণ বডিটি কেটে ফেলি। তারপর শুরু করি অ্যাভেন্টেডর মডেলের ডিজাইনের কাজ। এ গাড়ির পার্টস পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ, বাংলাদেশে এ ধরনের গাড়ি নেই। অনেক কষ্ট করে পার্টস খুঁজে গাড়িটি তৈরি করেছি।
তিনি জানান, তার এই কাজে সবসময় সহায়তা করেছেন ইমন নামে এক সহকর্মী। আছেন আরও অনেকেই। পনের লাখ টাকার ১১ লাখ তিনি লোন করেছেন ব্যাংক থেকে। গাড়ির বাহ্যিক দিক নির্মাণ শেষ হলেও ভেতরের কাজ বাকি। সে জন্য আরও টাকার দরকার।
দেশে এমন স্পোর্টস কার তৈরি অনেকটাই অসম্ভব। কিন্তু মানুষের ইচ্ছা থাকলে সেটি করা ব্যাপার না। আমি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। ওস্তাদ যা শিখিয়েছেন, সেটি মাথায় রেখেই কাজ করেছি। পেরেছি। গাড়িটি তৈরি করলেও দেশের সড়কে চলাচলের অনুমতি নেই। সরকারের কাছে এটিকে রাস্তায় নামাতে অনুমতি চাই। না হলে আমার স্বপ্ন ও পরিশ্রম মূল্যহীন হয়ে যাবে।
আলাপের সময় বাংলাদেশি মডেলের গাড়ি নির্মাণের কথাও হলেন আজিজ। তার আশা, সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করলে কোনো ব্র্যান্ডের আদলে নয়, বাংলাদেশের স্পোর্টস কার তৈরি করবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এমজে