খাগড়াছড়ি ও আগরতলা: শখ করে বন্ধুরা মিলে ভারতের ত্রিপুরায় অনুষ্টিত ডুম্বুর মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের একই গ্রামের ১০ বন্ধু। অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের গ্রেফতার করে স্থানীয় থানা পুলিশ।
গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) তারা সেখানে গ্রেফতার হয়।
এদিকে এই খবরে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। তাদের কান্না থামছে না। সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন মায়েরা।
গ্রেফতাররা হলেন- খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইছড়ি ইউনিয়নের গ্যাস টিলা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে স্থানীয় দোকানদার মো.জাহাঙ্গীর আলম (২৭), মো. কালা মিয়ার ছেলে কৃষক মো. আবদুল কাদের (২৭), মো. শাহ আলমের ছেলে মো. রানা (২৪), আব্দুল কাদেরের ছেলে ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন (২৭), মৃত হরি সাধন দে’র ছেলে ব্যবসায়ী উজ্বল দে (৩২), রাজা মিয়ার ছেলে দিনমজুর মানিক হোসেন (২৪), সিরাজ মুন্সীর ছেলে মাসুদ পারভেজ রুবেল (২৯), মৃত নিদু কর্মকারের ছেলে দিনমজুর রাম প্রসাদ কর্মকার (৩৮), সাধন বড়ুয়ার ছেলে কৃষক শিবু বড়ুয়া(৩০) এবং জেলা সদরের গামারিঢালা এলাকার ইয়াকুব আলী বাহারে ছেলে মো. রুবেল (৩০)।
জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতি জেলার নতুনবাজার থানাধীন ডুম্বুর লেকে ডুম্বুর মেলার আয়োজন করা হয়। গোমতী নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে ডুম্বুর লেকে প্রতি বছর দুই দিন ব্যাপী এই তীর্থ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি পানছড়ির দুদুকছড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ডুম্বুর মেলায় অংশ নেন। এবার অনেকের মতো মাইসছড়ির গ্রেফতার ১০ বন্ধু ডুম্বুর মেলা দেখতে যান।
মেলা থেকে একটি গাড়িতে করে তারা রাজধানী আগরতলার দিকে যাওয়ার পথে স্থানীয় গাড়িচালকের সাথে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা বাংলাদেশি জেনে স্থানীয় বিশ্রামপুর থানা পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে। ওই দিন (১৩ জানুয়ারি) পুলিশ তাদের বিশালগড় মহকুমা আদালতে তুললে আদালত ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের প্রত্যেককে ১৫ দিনের কারাদণ্ড এবং দেড় হাজার রুপি করে জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও তিন দিনের কারাভোগ করতে হবে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিশ্রামগঞ্জ থানার ওসি সুবিমল দেবনাথ জানান, গ্রেফতারদের পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না। তারা অবৈধ পথে ত্রিপুরায় ঢুকেছিল। আমরা আদালতে পেশ করলে আদালত ১৫ দিনের জেল দিয়েছেন। সাজা শেষে তাদের কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে পুশব্যাক করা যায় তা আমরা দেখবো।
এদিকে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে খাগড়াছড়ির মাইসছড়িতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ত্রিপুরায় গ্রেফতারদের পরিবারের সদস্যরা ভীড় করেন। এসময় তারা সন্তান ফিরে পাওয়ার দাবি জানান।
গ্রেফতার মো. রানার মা কুসুম আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে বাড়ি এসে আমার ছেলে বলে ডুম্বুর মেলা দেখতে বন্ধুরা মিলে ভারত যাবে। ওই দিন রাত ৩টার দিকে সে ঘর থেকে বের হয়। সন্ধ্যায় খবর পাই তাকে অন্য বন্ধুদেরসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমার স্বামী অসুস্থ। সংসারের পুরো দ্বায়িত্ব আমার ছেলের উপর। সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই মা।
গ্রেফতার মনির হোসেনের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেকের মতো আমার ভাইসহ এলাকার অনেকে ভারতে মেলা দেখতে গেছে। সবাই চলে আসলেও আমার ভাইসহ গ্রামের অন্যরা বাড়ি না আসায় নানা ভাবে খোঁজ নিতে থাকি। সীমান্তের কাছাকাছি গিয়েও কোনো খবর পাইনি। রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি ওখানকার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে এবং ১৫দিনের জেল হয়েছে। এখন কোথায় গেলে কার মাধ্যমে গেলে আমাদের ভাইদের ফেরত পাব জানি না। আমরা চাই সরকার যেন তাদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়।
তবে এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি প্রশাসনের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে ১০ জন অনুপ্রবেশকারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় রীতিমতো রাজ্যের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এডি/এসএ