ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাজেটে অর্থ বরাদ্দসহ ১২ দাবি নির্মাণ শ্রমিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
বাজেটে অর্থ বরাদ্দসহ ১২ দাবি নির্মাণ শ্রমিকদের

ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ও মৌলিক অধিকার আদায়সহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন ইমারত নির্মাণ শ্রমিকরা।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে এসব দাবি জানায়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাত হলো নির্মাণ খাত। এই খাতে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন। প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও রয়েছে আমাদের দেশের সমপরিমাণ নির্মাণ শ্রমিক। আধুনিক নাগরিক সভ্যতা বিনির্মাণের মূল কারিগর হলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। দেশের দালান কোঠা, ব্রিজ-কালবার্টসহ সকল নান্দনিক সৌন্দর্য ও অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে নীরবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিকরাও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সমানভাবে ভূমিকা রেখে চলছেন।

তারা আরও বলেন, যাদের শ্রমে ঘামে জাতীয় অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, দেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হতে চলছে সেই নির্মাণ শ্রমিকরা এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাষ্ট্রের কাছে তাদের কাজের তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। নেই সামাজিক সুরক্ষা। এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত বা নিহত হন। অনেকেই দুর্ঘটনায় সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারান ও পঙ্গুত্ববরণ করেন। যে শ্রমিকরা দেশ গড়ার কারিগর স্বাধীনতার ৫ দশক পরেও তাদের মজুরি, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আজও আন্দোলন করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।

তাই নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবি জানান বক্তারা।

নির্মাণ শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো—সরকারি উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা শহরে থানা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক এবং সারাদেশে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক নির্মাণ কলোনি স্থাপন করে সুলভ মূল্যে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার মাধ্যমে নির্মাণ শ্রমিকদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে; কলোনিতে শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল এবং চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে; বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা প্রতিমাসে একবার করতে হবে; তহবিল থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং সাহায্যের আবেদন ফরমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে; শ্রম আইনের আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

রেশনিং ব্যবস্থা, পেনশন স্কিম চালু, দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত বা আজীবন পঙ্গুত্ব বরণকারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইএলও কনভেনশন ১২১ মোতাবেক এক জীবনের সমপরিমান ক্ষতিপূরণের বিধান শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; কোনভাবেই শ্রমিকদের ১৫ লাখ টাকার কম ক্ষতিপূরণ যাতে না দিতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের অধিকার বাস্তবায়নে যাতে সহজে আদালতের স্মরণাপন্ন হতে পারে সে লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে এবং অধিকার ও পাওনাদির বিষয়ে ৪২ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে; ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ এবং নির্মাণ শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের করতে হবে; শ্রম আইন সংশোধনী ২০০৬ এর ৩২৩ ধারা মোতাবেক জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য কাউন্সিলে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; কর্মস্থলে নির্মাণ শ্রমিকরা যাতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে; সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে শুধু সার্ভিস চার্জ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে বিদেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বর্তমানে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের হয়রানি ও দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে; সরকারি উদ্যোগে বিভাগীয় শহরে থানা ভিত্তিক এবং জেলা ও উপজেলায় শ্রম ছাউনি নির্মাণ করতে হবে; নারী নির্মাণ শ্রমিকদের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করতে হবে; নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রেজিস্ট্রার খাতা রাখার বিধান সকল নির্মাণাধীন ভবনে বাস্তবায়ন করতে হবে; নির্মাণ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।

ইনসাবের সভাপতি মো. রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ইনসাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, গণতন্ত্রী পার্টির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন সেলিমসহ ইনসাবের জেলা ও থানার নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।