টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী চমচমের নাম শুনলে অনেকের জিভে জল আসে। ২০০ বছর ধরে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচমের নামডাক ও ঐতিহ্য রয়েছে।
তবে গত তিন মাস ধরে গ্যাস সংকটের কারণে টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাসের সংকট থাকলেও তাদের আগের মতোই পুরো গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়।
চমচম ব্যবসায়ীরা জানান, গত অক্টোবর থেকে তারা স্বাবাভিকভাবে গ্যাস পাচ্ছে না। জ্বালানি হিসেবে তারা কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে চমচম তৈরি করছেন। এতে চার ভাগের এক ভাগ উৎপাদন করতে পারছেন না কারিগররা। ফলে চমচম উৎপাদন ব্যাহতসহ খরচ কয়েক গুণ বেশি হচ্ছে।
সরেজমিন টাঙ্গাইল শহরের চমচমের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি চমচমের শো রুমের আলাদা আলাদা কারখানা রয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানায় ৪ থেকে ৮টি করে গ্যাসের চুলা বসানো আছে। প্রত্যেকটি চুলায় গ্যাসের সংযোগ থাকলেও গ্যাস না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কাঠের চুলাতেই লাকড়ি পুড়িয়ে প্রথমে দুধ জাল কো হচ্ছে। পরে সেই দুধ থেকে ছানা বের করে সেই ছানা ও চিনি এবং আংশিক ময়দা দিয়ে চমচম তৈরি করছে। চমচম যেমন নরম তেমন ঘ্রাণেও অনন্য। দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি করা গুঁড়া মাওয়া বানিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় চমচমের ওপর যাতে স্বাদে আনে অন্যরকম বৈচিত্র্য।
গাজীপুর থেকে আসা ক্রেতা রাকিব হাসান বলেন, বইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের চমচমের সুখ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিষয়টি জানার পর টাঙ্গাইল এসে চমচম কিনে খাওয়ার ইচ্ছা ছিল। সেই কারণে দুই বন্ধু টাঙ্গাইল এসেছি। দুই কেজি চমচম ৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। খেতে অনেক সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ।
গোপালগঞ্জের মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারিগর আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে গ্যাসের সাপ্লাই খুবই কম। লাকড়ি দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ মণের বেশি লাকড়ি লাগে। তবে উৎপাদন আগের মতো না হওয়ায় এক বেলা দোকানে মিষ্টি থাকে, আরেক বেলা থাকে না। এতে বেচাকিনিও খুব কম হয়।
পোড়াবাড়ী মুসলিম মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের, স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ বলেন, গ্যাস স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ করে চমচম উৎপাদন করা যেত। বর্তমানে কাঠ খড়ি দিয়ে চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মণ উৎপাদন করা যায়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তবে গ্যাস কম সরবরাহ থাকলেও বিল সমপরিমাণই আসে। আগে মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল আসতো এখনও ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল আসে।
জেলা রেঁস্তোরা ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এবং জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী স্বপন ঘোষ জানান, গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন করা যাচ্ছে। প্রতিদিন আমার দোকানে ২০/২৫ মণ লাকড়ি ব্যবহার হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করায় খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। শহরের প্রত্যেকটি মিষ্টির দোকানের কারখানায় গ্যাসের চুলায় চমচম তেরি করা হয়। গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ঢাকা প্রধান ফিডার থেকে গ্যাস কম সরবরাহ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমিতির অধীনে ২০০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। আর সবমিলিয়ে টাঙ্গাইল জেলায় ১০০০টির মতো মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে চমচম বিক্রি হয়।
টাঙ্গাইল জোনাল মার্কের্টিং অফিসের ম্যানেজার খোরশেদ আলম বলেন, ফিডার লাইন থেকে গ্যাস কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন গ্যাস পেতাম। বর্তমানে প্রতিদিন পাচ্ছি ৪০ মিলিয়ন। ভোলায় কিছু গ্যাস আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই গ্যাস ঢাকায় আনার চেষ্টা চলছে। সেটি আনতে পারলে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
আরএ