ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে রাজশাহীতে উৎসবের আমেজ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে রাজশাহীতে উৎসবের আমেজ

রাজশাহী: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর পর রাজশাহী আসছেন। আগামী ২৯ জানুয়ারি তিনি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে বর্ণিল রূপে সাজছে পদ্মাপাড়ের এ শহর।

রাজশাহীতে জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে সকালে সারদা পুলিশ একাডেমী পরিদর্শন ও পুলিশ প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।

এরই মধ্যে রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, নিশান, তোরণের পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় বিভাগজুড়ে এক ভিন্ন রকমের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুরু হয়েছে প্রচার মাইকিং। রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে প্রতিদিনই ওয়ার্ড, থানা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে হচ্ছে- প্রচার মিছিল, গণসংযোগ, হ্যান্ডবিল বিলি, প্রস্তুতি সভা ইত্যাদি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা সফল করতে পুরো রাজশাহী বিভাগজুড়েই এখন ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্রের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সাজতে শুরু করেছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। দেশের সরকার প্রধানকে বরণ করে নিতেই এতো আয়োজন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির অংশগ্রহণে রাজশাহীতে সম্ভাব্য শেষ জনসভা এটি।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ণিল রূপে সাজতে শুরু করেছে মহানগর। স্থানীয় নেতাদের মধ্যেও নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দলীয় সভাপতির নজরে আসতে রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, নিশান, তোরণ টানানোসহ নানা কর্মসূচি পালনে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে।

স্থানীয় নেতারা পথে ঘাটে, অলিতে-গলিতে, হাটে-বাজারে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ব্যানার ফেস্টুন নেই। সবখানেই এখন প্রধানমন্ত্রী আগমনের শুভেচ্ছা ও উন্নয়ন বার্তা। শীর্ষ নেতা থেকে জুনিয়ররা সবাই প্রধানমন্ত্রীর আগমনের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন ব্যানার আর ফেস্টুন ঝুলিয়ে। কোথাও কোথাও এক খাম্বাতেই আছে ৪/৫ নেতার শুভেচ্ছা।

বিশেষ করে সমাবেশস্থল রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু করে রাজশাহী মহানগরীর বানেশ্বর হয়ে সারদা পুলিশ একাডেমির সড়ক পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মহানগরীর কোনো গলিও বাদ যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে রাজশাহীবাসী অধীর অপেক্ষায় আছেন। তার আগমনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তার সম্মানে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পুরো রাজশাহীকেই। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজশাহী মহানগরীর ততোই সজ্জিত হয়ে উঠছে।

খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষে ১ জানুয়ারি থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। মহানগর পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে সভা করেছি, বিভিন্ন কমিটিগুলো করেছি। এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে আমাদের নয়টি সাংগঠনিক জেলা, তাদেরকে নিয়ে কমিটি গঠন করেছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সভা করেছেন।

রাসিক মেয়র বলেন, শনিবার (২১ জানুয়ারি) যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রাজশাহীতে আসবেন, তারাও বিভাগীয় পর্যায়ে মিটিং করবেন। আমরা পাশ্বর্বতী জেলাগুলোতেও যাচ্ছি, প্রতিটি জেলাতেই আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যতদিন যাবে আমাদের প্রস্তুত ততবেশি ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে। এই মাদ্রামা মাঠ শুধু নয়, মাঠের পাশে যে ঈদমাঠ আছে সেটিসহ পুরো শহর লোকে লোকারণ্য হবে। মাঠ কানায় কানায় ভরে যাবে। তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না।

এদিকে, সরকার প্রধানের আগমন উপলক্ষে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজশাহীজুড়ে নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে একজন ভিভিআইপির প্রটোকলে যত সুবিধা লাগে তার সব কিছুই আমরা প্রস্তুত রেখেছি। এছাড়াও মাদ্রাসা মাঠে একটি অস্থায়ী পুলিশের তাবু টানিয়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলছে। পাশাপাশি সাইবার টিম, বোম্ব ডিস্পোজাল টিম, সিআইডি, সাদা পোষাকি পুলিশ মোতায়েন আছে। সমাবেশের দিন নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। এরই মধ্যে সিসি ক্যামেরাগুলো চেক করা হচ্ছে পাশপাশি নতুন ক্যামেরাও যোগ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর প্রথম কোনো নির্বাচনী সমাবেশ। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর এই ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার কাছে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চেয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি।  

২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবার হরিয়ানের বিশাল জনসভায় হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় রাজশাহীতে এই সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৩
এসএস/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।