ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চেক টেম্পারিং করে ৩৮ লাখ টাকা লোপাট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
চেক টেম্পারিং করে ৩৮ লাখ টাকা লোপাট!

রাজশাহী: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ১৮০টি চেক টেম্পারিং করে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগে অবশেষে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিএমডিএর রাজশাহীর গোদাগাড়ী জোন-২ এর কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলেমিশে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন—রাজশাহীর গোদাগাড়ী জোন-২ এর তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিন (৪৫) এবং একই কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী জিএফএম হাসনুল ইসলাম (৫৫)। হাসনুল বর্তমানে বিএমডিএর রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় কর্মরত আছেন। আর খাবির উদ্দিন গোদাগাড়ী থেকে নওগাঁর মান্দায় বদলি হয়েছিলেন। বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। এ দুজনের বিরুদ্ধে ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া খাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। সেখানে তার বিরুদ্ধে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেক মামলায় বিএমডিএর সাময়িক বরখাস্ত থাকা সহকারী হিসাবরক্ষক মতিউর রহমানের (৫০) বিরুদ্ধে এক লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

খাবির ও হাসনুলের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হাসনুল গোদাগাড়ীতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন আয়-ব্যয় কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি বিল ভাউচারা পাস, চেক ইস্যু এবং কর্তৃপক্ষের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিন। তিনি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ক্যাশ বই সংরক্ষণ, আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধকরণ, চেক প্রস্তুত ও লিপিবদ্ধকরণ, চেক রেজিস্ট্রারে চেকের তথ্য রেকর্ডভুক্তকরণ ও সংরক্ষণ এবং ইস্যু করা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তারা দুজনে চেক টেম্পারিং করে সরকারি অর্থ লোপাট করেছেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক গত বছর বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করে। চেকের কপি ও মুড়ি বই পর্যালোচনায় দেখা যায়, খাবির উদ্দিন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য চেকে এবং চেকের মুড়িতে সমপরিমাণ টাকার অংক লিপিবদ্ধ করে আয়-ব্যয় কর্মকর্তার স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। কিন্তু খাবির উদ্দিন ব্যাংকে চেকগুলো দেওয়ার আগে সুকৌশলে টাকার অংক পরিবর্তন করে নিতেন। এভাবে বেশি টাকা তুলতেন।

চেক পর্যালোচনায় দেখা যায়, চেকের মুড়ি অনুযায়ী টাকার অংক লেখার সময় বাম পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে আয়-ব্যয় কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতেন তিনি। পরবর্তীতে ইচ্ছামাফিক টাকার অংক পরিবর্তন করে নিতেন।

এ প্রক্রিয়ায় ১৮০টি চেকে টাকার অংক কাটাকাটি বা ওভার রাইটিংয়ের মাধ্যমে পরিবর্তন করে টাকার অংক বৃদ্ধি করে তোলা হয়েছে। ওই ১৮০টি চেকে প্রকৃতপক্ষে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৪ টাকা তোলা যেত। কিন্তু টাকার অংক ও কথায় পরিবর্তন করে তোলা হয়েছে ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৫২ টাকা। খাবির উদ্দিন ও জিএফএম হাসনুল ইসলাম যোগসাজশ করেই বিভিন্ন খাতের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা তুলেছেন।

দুদক মামলার এজাহারে বলেছে, এ দুই কর্মকর্তা পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধ করেছেন। তারা চেক টেম্পারিং করে অনেক রেকর্ডপত্র গায়েবও করে দেন। তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/২০১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নথি আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে খাবিরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ী জোন-২ এ কর্মরত থাকাকালীন তিনি ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ভেন্ডিং ইউনিটের (এমভিইউ) রিচার্জেও বিপরীতে ডিলারদের প্রাপ্য কমিশনের ওপর আদায় করা আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৮ টাকা এবং মানি রশিদ বইমূলে আদায় করা ৫০ হাজার ৮৭০ টাকাসহ মোট ১১ লাখ ৩৯ লাখ ১১৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি এসব রশিদ বই গায়েব করেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

তৃতীয় মামলার আসামি মতিউর রহমানও গোদাগাড়ী জোন-২ এ সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি এমভিইউ রিচার্জের বিপরীতে ডিলারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কমিশনের ওপর প্রযোজ্য আয়কর ও ভ্যাটের অর্থ রশিদ মূলে আদায় করে বিএমডিএ এর সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেননি। এভাবে তিনি ১ লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলার বিষয়ে মোহনপুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী জিএফএম হাসনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো যথাযথভাবে চেক সই করতাম। সেই চেক নিয়ে যদি কেউ টেম্পারিং করে, তাহলে এর দায় তার এবং ব্যাংকের। এ জন্য আমি কোনভাবেই দায়ী নই। মামলা হয়েছে কিনা তাও আমি জানি না। ’

সাময়িক বরখাস্ত থাকা সহকারী হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ঘটনা সত্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।