পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার না পেয়ে অসহায় এক বাবা আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
একই মামলায় জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন নামে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে (ইউপি) ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী থানায় পৃথক মামলা দুটি করেন মৃত ব্যক্তির ছেলে।
মামলায় জড়ানো ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন। আসামিরা হলেন- ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মন (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মন (৪৬), একই এলাকার মৃত ধনবর বর্মনের ছেলে ভবেন বর্মন (৫০) এবং অলকান্ত বর্মনের ছেলে কাজল বর্মন (২৩)।
মামলার এজাহারে জানা যায়- গত ১৭ জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত পলাশ চন্দ্র বর্মন জোরপূর্বক বাড়ি থেকে কলেজ পড়ুয়া তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এতে সহযোগিতা করে অপর আসামি কাজল। পরে ভুক্তভোগীর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে পলাশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন ওই তরুণীর বোন। চিকিৎসাধীন ছিলেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি সুরাহার আশ্বাস দেন। পরদিন চেয়ারম্যানের কথামত আসামি কাজলের বাড়িতে বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে সুরাহার পরিবর্তে মামলার বাদী এবং তার বাবাকে আসামিরা উল্টো হুমকি-ধমকি দেন। পরে চেয়ারম্যান আরও তিন-চারদিন সময় চান মীমাংসার জন্য। কিন্তু তিনি বিষয়টির গুরুত্ব না দিয়ে কালক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মামলার বাদী সুজন চন্দ্র জানান, এ ঘটনার বিচার দাবি করলে বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সুরাহার আশ্বাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিন পার হলেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি তিনি। বার বার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোনো বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তার বাবা (৫০)। গত বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গলায় চাঁদর পেঁচিয়ে বাড়ির অদূরে আবাদি জমির পাশের একটি পাকুর গাছের ডালের ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি।
মামলার বাদী আরও বলেন, মৌখিক অভিযোগে চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতা দেখে ২৪ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেই। পরে চেয়ারম্যান আমাদের নোটিশের মাধ্যমে জানান ১ ফেব্রুয়ারি ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে। কিন্তু সেদিন খবর পাই আসামিরা উপস্থিত হবে না। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও টালবাহানা শুরু করেন। বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় আমার বাবা ভেঙে পড়েন।
এদিকে পরিষদে অভিযোগ দেওয়ায় পলাশের বাবা শ্যামল এবং আসামি ভবেন আমার বাবাকে তাচ্ছিল্য করেন এবং বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন। আমার বাবা বাড়ি এসেই কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে রাতে সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেন। একাধিকবার বলার পরেও চেয়ারম্যান ন্যায় বিচার করেননি বলেই আমার বাবা বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আটোয়ারী থানা এলাকায় বাবার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল, এজন্য আটোয়ারী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করেছি। আর সদর থানায় করেছি বোনের ধর্ষণের বিষয়ে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমি অভিযোগ পেয়ে উভয়পক্ষকে নোটিশ করেছি। গত ১ ফেব্রুয়ারি বসার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগকারীরাই আসেননি। না আসলে কিভাবে সুরাহা করবো? আর আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তবে কেন আত্মহত্যা করেছে তা জানিনা।
পৃথক দুই মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা এবং পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
আরএ