ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহী সিআরপি সেন্টারে সেবা পাবেন ১২ হাজার রোগী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
রাজশাহী সিআরপি সেন্টারে সেবা পাবেন ১২ হাজার রোগী

রাজশাহী: পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) সাভার সদর দপ্তরের আদলে প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিভাগে আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিবারের পক্ষ থেকে দান করা ১৫ বিঘা জমির ওপর এই পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

যার নাম হবে ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’।

কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হলে এখান থেকে প্রতি বছর এ অঞ্চলের ১২ হাজার রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা নিতে পারবেন। একইসঙ্গে এখান থেকে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাপাসিয়ায় ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ স্থাপনের লক্ষ্যে পরিচিত সভায় এ তথ্য জানানো হয়।  

পরিচিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর মেয়র।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মানুষের কল্যাণে আমার বাবা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও মা মরহুমা জাহানারা জামানের নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছে ছিল। রাজশাহীতে সিআরপির আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেলক্ষ্য পূরণ হচ্ছে। এখান থেকে রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার অসহায় মানুষ সেবা নিতে পারবেন।
 
মেয়র আরো বলেন, এই পুনর্বাসন কেন্দ্র শুধু চিকিৎসা নয়, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রের গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। এছাড়া এ পুনর্বাসন কেন্দ্রকে করে পিছিয়ে পড়া কাটাখালি ও কাপাসিয়া এলাকা এগিয়ে যাবে।

সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী ড. ভেলরী এন টেইলর।  

তিনি বলেন, সিআরপিকে মূল্যবান ৫ একর জমিদানের মহতি উদ্যোগে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার পরিবারকে সিআরপির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

ড. ভেলরী এন টেইলর বলেন, ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ হবে আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র। মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এখানে পরিপূর্ণ পুনর্বাসন সেবা নিতে পারবেন। এখানে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি ও সংযোজন, অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী তৈরি করা হবে। এটি প্রতিষ্ঠার কারণে সাভারে সদর দপ্তরের ওপর চাপ কমে যাবে।

টিআরপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইদুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।  

অনুষ্ঠানে শহীদ কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী ও আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা বক্তব্য রাখেন।  

অনুষ্ঠানে সিআরপি বিষয়ক উপস্থাপনা করেন সিআরপির বিএইচপিআইর প্রিন্সিপাল ডা. মো. ওমর আলী সরকার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টিআরপির সদস্য মুশতাক আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি রশিদুল হাসান, আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক, উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন কবিকুঞ্জ সভাপতি প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শামসুদ্দিন আহমেদ খোকন, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এসএমএ মান্নান, সাবেক মহানগর কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, কাটাখালি পৌর সভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত নান্নু প্রমুখ।

এসময় জানানো হয়, সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারে যেসব চিকিৎসা সেবাসমূহ পাওয়া যাবে, সেগুলো, অপারেশন সেবা। প্যাথলজি ও রেডিওলজি সেবা। অভ্যন্তরীণ সেবার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি পুনবার্সন কেন্দ্র, অটিজম ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত শিশুবিভাগ, স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনর্বাসন ওয়ার্ড, মেডিকেল কনসালটেন্সি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুরেজ থেরাপি, শিশু বিভাগ, ক্লাব ফুট বা মুগুর পা চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ডে কেয়ার সেন্টার। পুনর্বাসন সেবাসমূহের মধ্যে থাকবে আর্থ-সামাজিক সহায়তা, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন, মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং, ক্রীড়া ও বিনোদন। আর সহায়ক ও পুনর্বাসন সামগ্রীর মধ্যে থাকবে প্রস্থেটিক্স এবং অর্র্থোটিক্স (কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন), অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি, সাপোর্টিভ সিটিং বিভাগ, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী।

এছাড়াও এখানে গড়ে তোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১ বছরের ইন্টার্নশিপসহ ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি ও স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনবার্সন সেবাদান কেন্দ্র, ভর্তিকৃত রোগীদের আবাসন সুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকদের জন্য আবাসন সুবিধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা।

সিআরপি একটি অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যা ট্রাস্ট ফর দি রিহ্যাবিলিটেশন অফ দি প্যারালাইজডের (টিআরপি) একটি বিশেষ প্রকল্প। ‘সৃষ্টির সেবাই স্রষ্টার সেবা’ এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭৯ সালে একজন ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ড. ভ্যালেরি এ টেইলর ৪ জন রোগী নিয়ে ঢাকায় পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারবাহিকতায় সারাদেশে সিআরপির মোট ১১টি উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আর্তমানবতার সেবায় রাজশহীতে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাপাসিয়ায় মূল সড়ক সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি সিআরপিকে দান করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার পরিবার। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এর সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন রাসিক মেয়র।

এ জমিতে রাসিক মেয়র লিটনের প্রয়াত বাবা-মায়ের নামে সিআরপি রাজশাহী-শহীদ এএইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।