ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে অজ্ঞান না করেই কিডনির অস্ত্রোপচারের ঘটনায় যমজ সন্তানসহ রেখা আক্তার (২০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দুই চিকিৎসকসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- পেশেন্ট কেয়ার ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিক মিয়া (৩৫), অমিত বাবু (৩০), ডা. মো. আশরাফুল হক মোল্লা (৪৫). ডা. আরিফ রব্বানী (৩১), মেহেদী (২৭) ও মো. তারেক মিয়া (৩০)।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মৃত রেখা আক্তারের স্বামী মাহবুব আলম বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এই মামলা করেন।
ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) ফারুক হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, মামলার বাদী মাহবুব আলম জেলার ত্রিশাল উপজেলার আমিয়ান ডাঙ্গুরী গ্রামের মৃত সাইদুল ইসলামের ছেলে। তিনি নিহত রেখা আক্তারের স্বামী। রেখা আক্তার ১৩ সপ্তাহের জমজ সন্তানের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এজাহারে বলা হয়, সম্প্রতি রেখা আক্তার কিডনিতে ব্যথা অনুভব করেন। এ অবস্থায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। এ ঘটনার পর ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পরিচিত মেহেদী হাসান নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী এলাকার পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাকে। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও অমিত বাবুর সঙ্গে কিডনির পাথর অপসারনের জন্য ৯৪ হাজার টাকার চুক্তি করেন।
এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন বাদী মাহবুব আলম। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে চিকিৎসকরা রেখা আক্তারকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। অপারেশন করে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখার ঘণ্টাখানেক পরেও রেখার জ্ঞান না ফিরলে তার স্বজনরা কান্নাকাটি শুরু করেন। ক্লিনিকে কর্তব্যরত কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানান, রোগীর অ্যানেস্থেসিয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে, তাই এমন হচ্ছে।
পরে ওই দিন (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে ডা. মো. আশরাফুল হক মোল্লা ও ডা. আরিফ রব্বানী ক্লিনিকে এসে অ্যাম্বুলেন্স করে রেখা আক্তারকে জোর করে চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর সেখান থেকে আবার পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের মেরে মরদেহ গুম করার হুমকি দেন। এ অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে মরদেহ ক্লিনিকের সামনে রেখে বিচার দাবি করেন স্বজনরা। পরে স্থানীয়রা ক্লিনিক ঘেরাও করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে, ওই দিন (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতেই জেলা সিভিল সার্জন ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং ওই কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেতন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: রোগী মেরে ফেলছিস!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এনএস