ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘হাত-পা ধইরাও মাফ পাই নাই’!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
‘হাত-পা ধইরাও মাফ পাই নাই’!

পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘ও ভাই, মোগো ছাইড়া দেন, মোরা গরিব মানুষ, মোগো মাইরা ফালাইলে বউ-মাইয়া-পোলা কেমনে বাঁচবে। মোগো ছাইড়া দেন।

মোগো জীবনটা রক্ষা করেন’।  

এভাবে আকুতি-মিনতি করেও রক্ষা পাননি ডাকাতদের হামলার শিকার মাছ ধরা ট্রলারের জেলে মধু মিয়া।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। এসময় ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে চোখে পাওয়া আঘাতের যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদছেন তিনি। আহত আরও ৮ জেলেও চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানে।

এর আগে শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৮০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায় একটি মাছ ধরার ট্রলারে হামলা চালায় ২৫-৩০ জনের এক সশস্ত্র ডাকাত বাহিনী। এ সময় ওই ট্রলারে থাকা ১৮ জেলেকে গুলি করে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তারা। তখন দিগ্বিদিক হয়ে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হন।

নিখোঁজ জেলেরা হলেন- কাইউম জোমাদ্দার (৩৫), ইয়াছিন জোমাদ্দার (৩২), আবুল কালাম (৫৮), শফিকুল মাঝি (৩৫), খাইরুল ইসলাম (৪০), আবদুল আলীম (৫৫), ফরিদ (৩৮), আবদুল হাই (৪০)। অপর জেলের নাম পাওয়া যায়নি।

ফিরে আসা জেলেরা হলেন- মো. মিরাজ হোসেন, আফজাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, রায়হান, আ. করিম, খোকন মিয়া, নুর মোহাম্মদ, মধু মিয়া ও আব্দুল হক।

জেলে মধু মিয়া সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রথমে আমাদের ট্রলারের পেছনে ধাক্কা দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে আমার বাম চোখে গুলি লাগে। আমরা চিৎকার দিলে আমাদের ট্রলারের উঠে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এসময় ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচতে আমি ট্রলারের পেছনে টয়লেটের মধ্যে ঢুকে দরজা আটকে দেই। তারপরও ডাকাতদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে দরজা ভেঙে আমাকে টেনে বের করে মারধর করে। কিছুক্ষণ পর দেখি আমাদের ট্রলারের অনেক জেলে নেই। তারা ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাগরে ঝাঁপ দেয়।

তিনি আরও বলেন, ডাকাতদের সঙ্গে তিনটি ট্রলার ছিল। আমাদের ট্রলারের ১০ লাখ টাকার জাল ও অন্তত ৫ লাখ টাকার রসদ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় তারা বলে যায়, তাদের ট্রলারে কোনো জেলে নেই।

এদিকে ফিরে আসা জেলেরা জানান, ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া ৯ জেলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত তারা। আদৌ তারা বেঁচে আছেন কিনা, তা নিয়ে তারা চিন্তিত।  

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ফিরে আসা জেলেদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে ছয় জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (সেবাচিম) পাঠানো হয়েছে।

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল হোসেন বলেন, নিখোঁজ ৯ জেলেকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বরিশাল‌ র‍্যাব-৮ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদ বলেন, আমরা খবর পেয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।