ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একটি প্রভাবশালী মহল ফসলি জমির পাশে খাল দখলে নিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকরা।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর মৌজায় বুড়িবিলের পাশে ৫ শতাধিক বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত শরিয়ত উল্লার ছেলে মো. তাহের মিয়া ও একই গ্রামের হাজী আবুল কাশেমের ছেলে মো. রাসেল মিয়া বিগত কয়েক বছর পূর্বে চরনারায়ণপুর মৌজাতে কিছু জমি ক্রয় করে জমিগুলোর পশ্চিম পাশে উত্তর-দক্ষিণ করে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। যার ফলে ওই এলাকার শত শত বিঘা কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুস্ক মৌসুমে পানির অভাব সৃষ্টির হয়ে জমিগুলো চাষে অযোগ্য হওয়ার উপক্রম। ভুক্তভোগী কৃষকরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের উপর চড়াও হয়ে ভয়ভীতি হুমকি ধমকি দেন তারা। এ চক্রটির দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায়না। নিরীহ কৃষকদের জমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত আছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
সম্প্রতি আবারও জমি কেটে পুকুর নির্মাণ শুরু করেছে তাহের মিয়া। কিন্তু পুকুরের পাড় নির্মাণের কারণে পুকুরের পেছনের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি থেকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার বর্ষাকালে পানি সরাতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ফলে শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।
খাল দখলের ফলে ভুক্তভোগী কৃষক লিয়াকত আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার এখানে প্রায় ২৮ বিঘা জমি রয়েছে। চারদিকে ঘুরিয়ে যে বাঁধ দিচ্ছে এতে করে আমাদের জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে পরেছে। এ বাঁধের ভেতরে শত শত বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। চাষাবাদ না করতে পারলে আমরা না খেয়ে মরব।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন মিয়া বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল খালে মাটি ফেলে বেড়িবাঁধ দিয়েছে। আমরা বাঁধা দিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের বাঁধা মানে নাই। তারা বলেছিল ব্রীজ করে দিবে কিন্তু ব্রিজ করে দেয় নাই। এ জন্য জমির পানি নিষ্কাশন হয় না। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তাহের মিয়া বলেন, এখানে কোনো খাল নেই। নিজের জায়গায় বাঁধ দিয়েছি। এতে করে কৃষকদের কোনো ক্ষতি হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চরনরায়ণপুরে ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। ২০১৯ সালে কৃষকরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। স্যারের নির্দেশে আমি তদন্ত করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে উঁচু বাঁধের কারণে কৃষকদের জমিতে পানি আসা-যাওয়া বাঁধাগ্রস্থ হয়। এখানে যদি আবারও বড় বাঁধা তৈরি করা হয় তাহলে কৃষি জমির ক্ষতি হবে। সেচের অভাবে জমিগুলো খালি পড়ে থাকবে। এটা কৃষির জন্য হুমকি স্বরুপ।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, কৃষকদের একটি দরখাস্ত পেয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এসএম