ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে ফায়ার সার্ভিস 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে ফায়ার সার্ভিস  ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: আগামী সপ্তাহেই রাজধানীতে অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

তুরস্কে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদলের দেশে ফেরার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় লাগে। আগামী সপ্তাহেই আপনারা এর কিছুটা বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন। প্রথমে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা অভিযানে যাব, যেখানে ভবনের নিয়মগুলো মানা হয়নি। যেসব ভবনে ফায়ার সেফটি আইন মানা হয়নি, সেগুলো আমরা দেখব। অন্য বিষয়গুলো নির্ধারিত ডিপার্টমেন্ট দেখবে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন। আমাদের ১৪ হাজার কর্মীর সবাই প্রশিক্ষিত। তাদের প্রতিনিয়ত আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি, এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের উন্নত যন্ত্রপাতিও আছে। তবে বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই যথেষ্ট নয়। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, আমাদের যারা সহযোগী সংস্থা রয়েছে, তাদের নিয়ে কাজ করছি। প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ ও মহড়াগুলো অব্যাহত রাখছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার ডিজি বলেন, আমাদের রাজধানী কতটা পরিকল্পিত, এই উত্তর আপনাদের কাছে আছে। কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা কতটুকু তৈরি? বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ হাজারের বেশি কর্মীর সবাই প্রশিক্ষিত। আমাদের ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরির টার্গেট ছিল, এর মধ্যে ৫০ হাজার তৈরি করেছি। তারা আবার অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ঢাকায় ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ হলে আমরা ঢুকতে পারব কি না, সেটি বিষয় না, আমাদের ঢুকতেই হবে। এজন্যই প্রশিক্ষণ। তাই এমন কিছু হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা চাই না এমন কোন ঘটনা হোক। কিন্তু প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্ধারিত বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেসব ভবন তৈরি হয়নি, সেগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে আমরা সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে কাজ করছি। সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাস্তবায়নের করার চেষ্টা করছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এক লাখের বেশি গার্মেন্টসকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রত্যেকে তাদের পরিবার ও নিজ কমিউনিটিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা করতে হবে। আমাদের যেসব যন্ত্রপাতি নেই, সেগুলোর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলছি।

পুরান ঢাকায় অবৈধ কেমিক্যালের দোকানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাজ অগ্নি নির্বাপণ করা, কারখানা সরানোর কাজ আমার নয়। নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর ওই এলাকায় এমন কোনো দোকানের লাইসেন্স দিচ্ছি না। যা আছে, সেগুলো অবৈধভাবে চলছে।

তুরস্কে উদ্ধার অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদলের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, আমাদের প্রতিনিধিদল উদ্ধার অভিযান শেষ করে গতকাল দেশে ফিরেছে। তুরস্কে তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আজকের দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের পতাকা সুনামের সঙ্গে উড়ছে আমাদের এই কার্যকলাপের মাধ্যমে। প্রথমবারের মতো ফায়ার সার্ভিস দেশের বাইরে উদ্ধার অভিযানে গেছে। সেখান থেকে আমাদের পেশাগত দক্ষতা অনেক উঁচুতে গিয়েছে। দোয়া করবেন আমাদের দেশে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। যদি ঘটে, আমরা পাশে আছি।

তুরস্কে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকারী দলের টিমলিডার ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি) দিনমনি শর্মা বলেন, বাংলাদেশের উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর ২৪ জন, সেনাবাহিনী মেডিকেল টিমের ১০ জন, ফায়ার সার্ভিসের ১২ জনসহ মোট ৪৬ জন ছিলেন। আমাদের জন্য বিদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন।  

তিনি বলেন, সেখানে রানা প্লাজার মতো শত শত ভবন ধসে পড়েছে। আমরা আদিয়ামান শহরে কাজ করেছি। শহরটি অনেক পরিকল্পিত হলেও সব ভবন ধসে পড়েছে। যে দু-একটি বাড়ি দাঁড়ানো আছে, সেগুলোতেও ফাটল ধরেছে। আমরা মোট  দুই প্রদেশে ১১টি ভবনে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। যেখানে কাজ করেছি, সফল হয়েছি। যেখানে হাত দিয়েছি মৃত-জীবিত ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, তুরস্কে ৪০টির মতো দেশ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশ দলকে সে দেশের সরকার নির্ধারিত দিনের চেয়েও পাঁচ দিন বেশি রাখার জন্য অনুরোধ করেছে। আমাদের এ অভিজ্ঞতার ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো দেশে সক্ষমতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারব, উদ্ধার অভিযান চালাতে পারবো। এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।