ঢাকা: দেশে প্রাণিসম্পদ খাত স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, এখন চাহিদা পূরণের পরে বাড়তি থাকছে। সে কারণে এখন প্রাণিসম্পদ রফতানিতে আমরা মনোযোগী হচ্ছি।
তিনি বলেন, এ খাতের আরও একটি বড় সাফল্য রয়েছে। এ সেক্টর দেশের বেকারত্ব সমস্যা অনেকটা দূর করেছে। খামারিরা এখন বড় বড় উদ্যোক্তা হয়েছে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, এ খাতের ব্যাপক সাফল্যের জন্য বেসরকারি খাতে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা এ খাতে বিল্পব এনেছে। অভাবনীয় সাফল্য এনেছে বিগত কয়েক বছর। আগে ভারত মায়ানমার থেকে গরু না এলে কোরবানি হতো না। এখন আর আমরা বিদেশ নির্ভর নই। এখন কোরবানির পর পশু অবিক্রিত থাকে। এ খাতকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করছি। ইতোমধ্যে মাছ রফতানি শুরু হয়ে গেছে। এক সময় আমরা মাংস ডিম দুধ রফতানি করতে পারবো।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের প্রসারের কারণে বিগত করোনার সময় আমাদের প্রাণিজ খাদ্যের কোনো সঙ্কট হয়নি। প্রোটিনের ঘাটতি হয়নি। মানুষ সুস্থ ছিলো। সবকিছু বন্ধ হয়ে থাকলেও আমরা ডিম দুধ মাংস মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি। সে সময় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিম দুধ মাংস বিক্রি করেছে। সেটা ছিলো অভাবনীয় সাফল্য। এখন রমজানে মানুষ কম দামে মাংস খেতে পারে। ওই সময় ৫০০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছি। ব্যবসায়ীরা আমাদের বাধা দিয়েছে। তারা বলেছে, এতো কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাদের ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ স্বল্পমূল্যে মাংস খেতে পেরেছে।
মন্ত্রী বলেন, এ খাতের আরও একটি বড় সাফল্য রয়েছে। এ খাত দেশের বেকারত্ব সমস্যা অনেকটা দূর করেছে। খামারিরা এখন বড় বড় উদ্যোক্তা হয়েছে। এখন আর আমাদের গ্রামে টাকা পাঠাতে হয়না। সেখানে টাকা ফর্ম করে। আমরা রফতানি বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ পশু হাসপাতালের করে দিয়েছি। পশু এখন হাসপাতালে আসবে না, ডাক্তার তার কাছে যাবে। আমরা এ খাতের ফিডে কর রেয়াত দিয়েছি। কেউ খামার করতে চাইলে তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এখন ব্রয়লার মুরগি নিয়ে একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বলতে চাই, ব্রয়লার ক্ষতিকর নয়। এটি নিয়ে কোনো সংশয় নেই। দুধ ডিম সব আন্তজার্তিক মানের ল্যাবে পরীক্ষা করছি আমরা। এগুলোতে কোনো সমস্যা নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, প্রাণিজ সম্পদের উন্নয়নে বেসরকারি সংগঠনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মাধ্যমে সরকার এই সেক্টরের উন্নত করছে। এই সেক্টরের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভারত সরকার যখন পশু দেওয়া বন্ধ করে দিলো আমরা তখন অনেক চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রবাদ আছে শাপে বর হয়। আমাদেরও তাই হয়েছে। এখন আমরা নিজেদের পশু কোরবানি দেই। প্রতিবছর এখন আমাদের পশু উদ্বৃত্ত থাকে। ভারত বন্ধ করায় আমাদের লাভই হয়েছে৷
প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রাপ্যতা সহজলভ্য করে তুলতে ‘স্মার্ট লাইভস্টক, স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশিদ, ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন, বিশ্ব পোল্ট্রি স্যাইন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ব্রাঞ্চের মহাসচিব মো. মাহাবুব হাসান। এছাড়া মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ বোরহান কবিরসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সরকারের খাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোক্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
জিসিজি/এসএ