ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চার নারী পেলেন ‘নাসরীন স্মৃতি পদক’ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
চার নারী পেলেন ‘নাসরীন স্মৃতি পদক’ 

ঢাকা: সমাজে যৌন হয়রানি ও বাল্যবিয়ে বন্ধ, জলবায়ু সুবিচার ও প্রাকৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় চার নারী পেয়েছেন নাসরীন স্মৃতি পদক।  

সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে আলোকীতে এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

মোট চারটি খাতে অসামান্য অবদান রাখায় এ পদক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া, প্রথাগত পেশা থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন পেশায় পারভীন, জলবায়ু সুবিচার ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় নারী নেতৃত্বে হুমায়আরা আহমেদ জেবা ও পরিবেশবান্ধব কৃষিতে নারীর ভূমিকায় মোছা. গোলসানারা বেগমকে এ পদক দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘উদ্ভাবনের নারী: জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি ও সমাধানে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড।

নাসরিন স্মৃতি পদক অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারী পক্ষের নির্বাহী সদস্য শিরীন হক, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, ইউবিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম মোস্তফা বিলাল, একশনএইড বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ফারাহ কবির প্রমুখ। তারা নির্বাচিতদের হাতে পদকের সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।

সানজিদা ময়মনসিংহের মেয়ে। নান্দাইল যুব উন্নয়ন ফোরাম ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সহায়তায় ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭৫টিরও বেশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন তিনি। এছাড়াও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের পরে সেসব ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত করে তাদের পড়ালেখার ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থা করার জন্যেও কাজ করছেন। এ অবদানের জন্য তিনি পেলেন নাসরীন স্মৃতি পদক।

পারভীন  থাকেন কল্যাণপুরের পোড়া বস্তিতে। তিনি পেশায় একজন রিকশা মেকানিক এবং বর্তমানে আটটি রিকশার মালিকও তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে এই কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন পারভীন। একজন বৃদ্ধ রিকশাচালককে সুবিচার পাওয়াতে গিয়ে তিনি প্রথম অনুপ্রেরণা পান এখানে কাজ করার। সেই রিকশাচালকই তাকে মেরামতের কাজ শিখান। প্রথমে নিজে রিকশা কিস্তিতে কিনে মানুষের কাছে ভাড়া দিতেন। তার পরে নিজে চালানো শুরু করেন। পরে টাকা জমিয়ে এবং কিস্তিতে রিকশা কেনা শুরু করেন। ২০১৯ সালে এসে তার নিজের ৪৫টি রিকশা হয়। ২০১৯ সালে সরকার রাস্তা বড় করার জন্য তার গ্যারেজ ভেঙে দেয়, তাই বাধ্য হয়ে আটটি রেখে বাকি রিকশা বিক্রি করে বস্তিতে জমি ভাড়া করে একটি বাড়ি করেন তিনি।

নিজের গ্যারেজে প্রতিদিনের জমা উঠানো, রিকশা মেরামত তিনি নিজেই করেন। পারভীন একজন সিঙ্গেল মাদার, দুটি অনাথ শিশুকে দত্তক নিয়ে তিনি পালন করেছেন। এ কাজ করতে প্রথম প্রথম পারভীনের লজ্জা লাগত, তবে ভেতরে জিদ ছিল সাবলম্বী হওয়ার। তিনি খুশি যে তিনি ভালো আছেন, নিজের একটি ঘর আছে।

তিনি বলেন, আমার কাছে অনেক রিকশাচালকরা রিকশা মেরামত করতে আসেন। তারা আমাকে গ্যারেজ মালিক এবং রিকশার মহাজন হিসেবে মানে।

সিলেটের মেয়ে হুমায়রা, জলবায়ু সচেতনতা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বপ্রথম তিনি জলবায়ু বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে সক্ষম হন। এর আগে এ সম্পর্কে ধারণা ছিল না তার। এরপর ইয়ুথনেটের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। করোনা মহামারি চলাকালীন পৃথিবী যখন ঘর বন্দী, ভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি জলবায়ু বিষয়েও সচেতনতা সৃষ্টিতেও তিনি কাজ করেছেন। নতুন প্রজন্মকে জলবায়ু নিয়ে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের বাইরেও শুধু লন্ডন নয়, কপ২৬কে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনারদের সঙ্গে অনলাইনে-অফলাইনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে হুমায়রা জলবায়ু সংক্রান্ত বার্তাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

গোলসানারা বেগম, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার একজন কৃষাণী। তিনি ভিন্নধর্মী পরিবেশবান্ধব কৃষি অনুশীলনের জন্য তার এলাকা পরিচিতি লাভ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সঙ্গে কৃষিকাজে সম্পৃক্ততা ছিল তার। বিয়ের পর কৃষিশ্রম বিক্রি করে কোনো মতে চলতো তার চারজনের সংসার। কিন্তু প্রচণ্ড টানাপোড়েনে কাটতো দিন। একশনএইড বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার স্থায়িত্বশীল কৃষি কর্মসূচির সহযোগিতায় কাজ শুরু করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৩
টিএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।