ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমাদের মাইকে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন, এটাই বড় প্রাপ্তি’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৩
‘আমাদের মাইকে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন, এটাই বড় প্রাপ্তি’

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বজ্রকণ্ঠ মানেই স্বাধীনতা। তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন বাংলার আপামর জনগণ।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণ পর্দায় এলেই দেখা যায় ইক্রোফানের সাথে লেখা ‘কল রেডী’। কালের পরিক্রমায় ‘কল রেডী’ এখন ইতিহাসের প্রতীক।

একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পেছনে কারিগরি সহায়তা দিয়েছিল ‘কল রেডী’। ৭-৮টি মাইক্রোফোনে এবং অন্তত দেড়শ’ মাইকে প্রচার হয়েছিল সেই ভাষণ। এর পেছনে কাজ করেছেন অন্তত ৩০ জন কলাকুশলী। ৭ মার্চের আগে সেই দিনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ‘কল রেডী’ কার্যালয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির একজন স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে।

ত্রিনাথ ঘোষ। হরিপদ ঘোষের চার ছেলের তৃতীয়জন। তার জ্যাঠা দয়াল ঘোষ, তিনি বিয়ে করেননি। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ত্রিনাথ ঘোষ বলেন, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কল রেডী’। প্রথমে নাম ছিল ‘আরজু লাইট হাউস’। পরে ‘কল রেডী’ নাম হয়েছে।

তিনি বলেন, ৬৬’র ছয় দফা, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরে ৭ মার্চের ভাষণ—এগুলোতে আমরা সরাসরি যুক্ত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে এলেন তখন আমরা ছিলাম। এখনও আছি। জীবনের বড় প্রাপ্তি হলো আমাদের মাইক দিয়ে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন। এটাই একটা বড় প্রাপ্তি। আর আমাদের আক্ষেপ হলো, এখনও কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাইনি আমরা।

আক্ষেপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ত্রিনাথ ঘোষ বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রত্যাশা করছি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান একটা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার (স্বীকৃতি) পাবে। আর কবে পাবে?

স্বীকৃতির জন্য কোনো আবেদন করা হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো অথেনটিক। আমাদের তো বানোনো জিনিস না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। জাতিসংঘের ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘কল রেডী’ লেখা আছে, আর সারা পৃথিবী তো দেখছে সেটা। সেটা তো আবেদন করার কিছু নেই। ‘কল রেডী’কে মূল্যায়ন করা হোক। এখন কি আবেদন করবো যে, স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক—সেটার আর দরকার নেই।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের ওই সময়ের যন্ত্রপাতিগুলোর অবস্থা জানতে চাইলে ত্রিনাথ ঘোষ বলেন, সেগুলো আমাদের কাছে রক্ষিত আছে। মাইক, মাইক্রোফোন ও এম্পিলিফায়ার ইত্যাদি।

যন্ত্রগুলো সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি, এগুলো সংরক্ষণ করেন, এগুলো নেন। কিন্তু আসতেছি, আসবো, এরকম করতে করতে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা যন্ত্রপাতিগুলো সরকারকে দিতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর একটি ইন্টারভিউ আছে, তিনি বলেছেন জানা নেই তার। জানতে হলে তো আমাদের কাছে আসতে হবে।

কতগুলো মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার হয় জানতে চাইলে ‘কল রেডী’র এই স্বত্বাধিকারী বলেন, দেড়শ হবে। আর মাইক্রোফোন ছিল ৭-৮টির মতো।

সেই সময়ে ত্রিনাথ ঘোষেরর জন্ম না হলেও বাবা ও জ্যাঠার (বাবার বড় ভাই) কাছে শোনা থেকে তিনি বলেন, তখন তো রেসকোর্স ময়দান ছিল সুনশান। বিভিন্ন জায়গায় দেড়শ’র মতো মাইকে বাজছিল বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ। বাবা-জ্যাঠারা সেখানে সরাসরি ছিলেন।

‘কল রেডী’ নামটি কীভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাবা-জ্যাঠারা মিলে দিয়েছিল। তারা চিন্তা করেছিল কল করলেই আমরা রেডি থাকি। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই নাম দেওয়া ‘কল রেডী’।

লক্ষ্মীবাজারে ৪৯ ঋষিকেশ দাশ রোডের পাশে বহুতল ভবনের নিচতলায় ‘কল রেডী’র কার্যালয়। সেই কার্যালয়ে বসেই কথা হয় ‘কল রেডী’ সম্পর্কে। সেই কার্যালয়ে ইতিহাসের স্মারক হিসেবে দেয়ালে টানানো আছে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হরপদ ঘোষকে দেখতে যাওয়া শেখ হাসিনার একটি ছবি। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। ওই সময়ে কলাকুশলীরাও বেঁচে নেই। সেই সময় অন্তত ৩০ জন কলাকুশলী কাজ করেন।

ত্রিনাথ ঘোষ বলেন, আমাদের পৈত্রিক বাড়ি বিক্রমপুর। সেখান থেকে একাত্তর সালের আগে ঢাকায় আসেন তারা।

আগে বাবা, জ্যাঠা ও জেঠু ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এখন আমরা চার ভাই ব্যবসা পরিচালনা করছি। বিশ্বনাথ ঘোষ, শিবনাথ ঘোষ, ত্রিনাথ ঘোষ ও শম্ভুনাথ ঘোষ—আমরা এই চার ভাই।

তিনি বলেন, ঐতিহ্যের কারণে বাবা-জ্যাঠার ব্যবসা ধরে রেখেছি। কিন্তু কাজ করে তেমন টাকা হয় না, প্যারা (ঝামেলা) বেশি।

বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে কোম্পানি খাপ খাইয়ে নিয়েছে জানিয়ে ত্রিনাথ বলেন, এখনও বড় বড় প্রোগ্রামগুলোতে আমাদের ডাক পড়ে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির এলাকায় কাজ করেছি। বড় প্রোগ্রামগুলো করতে পারি বলেই আমাদের ডাকে। না পারলে তো আর ডাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।