ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪৩১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, দাম কমানোর উপায় খুঁজুন: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, দাম কমানোর উপায় খুঁজুন: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: পণ্যের দাম কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের তিনি বলেছেন, দাম কমানোর পদক্ষেপ নিন, নইলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন।

শনিবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাণিজ্যিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। শুধু আমাদের মতো দেশ না উন্নত দেশগুলোও হিমসিম খাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পন্থা খুঁজে বের করতে হবে, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদারতা এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন বাংলাদেশকে আপনারা আপন দেশ হিসেবে মনে করবেন। নিজের দেশ মনে করে বিনিয়োগ করবেন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে অভ্যন্তরীণ ও বিশাল আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশের সুযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারে কেন্দ্রস্থল হতে পারে।

অনুষ্ঠানে দেশের কর্মক্ষম মানব সম্পদের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ কর্মজীবী বয়সে অবস্থান করছেন। আমাদের রয়েছে সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য একটি তরুণ জনগোষ্ঠী। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সে ১১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যেকোনো বিনিয়োগে মূল্যবান অবদান রাখতে প্রস্তুত।

পরিকল্পিত শিল্প বিকাশে সারা দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০৩০ সালের মধ্যে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ আহ্বান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। আমরা ৩৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এসব পার্ক উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

গতিশীল ও ঝামেলা মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ কর্মসূচি- বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে পঞ্চাশটি সংস্কার এবং আগামী তিন বছরে ১০০টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে। যাতে ওই লাল ফিতার দৌরাত্ম্যটা না থাকে। সেটা সরিয়ে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে সাথে সাথে বাস্তবায়ন হবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ৫ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের জন্য একইসঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে, আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদের তৈরি করতে হবে। উত্তরণ-পরবর্তী পরিবেশে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সরকার প্রধান।

দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও এবং দুইশর বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্য সৌদি বাণিজ্য মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কর্ম দর্জি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন জং। স্বাগত বক্তব্য দেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।