ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২ যুগ কবরস্থানে কাটিয়ে অবশেষে নিজের একটি ঘর পেলেন মালেছা 

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
২ যুগ কবরস্থানে কাটিয়ে অবশেষে নিজের একটি ঘর পেলেন মালেছা 

নরসিংদী: দুই যুগ কবরস্থানে ঝুঁপড়ি ঘরে বাস করেছেন মালেছা বেগমের। সত্তর বছর বয়সী মালেছা খাতুন কখনও ভাবেননি কপালে জুটবে বসবাসের জন্য এক টুকরো জমি-ঘর।

কবরস্থানের ওই ঝুঁপড়িতেই জন্ম দেন দুই সন্তান। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে জমিসহ ঘর পেয়ে ফেলছেন আনন্দের অশ্রু।  

দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ জীবনে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি। বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মালেছা বেগমের হাতে দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান।  

জানা যায়, নরসিংদী শিলমান্দি ইউনিয়নের টেকপাড়া কবরস্থানে কয়েকটি টিন আর সিমেন্টের কাগজ দিয়ে জোড়াতালির জীর্ণ ঘরে দুই যুগ ধরে বাস করছিলেন মালেছা বেগম। দুই সন্তান হাসিনা ও সুমনের জন্ম হয়েছে এখানেই। এরপর স্বামী ছেড়ে যান তাদের। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। বড় মেয়ে হাসিনার বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখন ছোট ছেলে সুমনকে নিয়ে তার সংসার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করেন। অবশেষে মালেছা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেন।

মালেছা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি ও আমার পরিবার ভূমিহীন। ২৫ বছর ধরে বাগহাটা এলাকার কবরস্থানের জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করে আসছি। আমার বাবার কবরও হয়েছে এখানে। অনেক কষ্টে দিন পার করছি। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়েই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়েছি। জীবনেও ভাবিনি জমিসহ থাকার ঘর পাব। এতো বছর আমার দিকে কেউ তাকায়নি। প্রধানমন্ত্রী আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। এ উপহার পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, তার জন্য দোয়া করব।

বুধবার নরসিংদীসহ সাতটি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।  

এ উপলক্ষে জেলার ছয় উপজেলা সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরায় পৃথকভাবে গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে চতুর্থ ধাপে জেলার ৩৪টি স্পটে নির্মাণ করা আরও ৪৫৯ জন গৃহহীন পরিবারকে দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে জেলায় চতুর্থ ধাপে মালেছার মত মোট ১১৬১ জনকে দুই শতাংশ জমিসহ সেমি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে।  

মনোহরদীর শাহেদা বেগম বলেন, অন্যের জমিতে ছাপড়া বানিয়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে থেকেছি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্ট করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় স্থায়ী একটি ঠিকানা পেলাম। এজন্য আমরা প্রধামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

আরেক উপকারভোগী রাশিদা বেগম বলেন, আমরা থাকার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতাম। আমাদের দেখে কেউ মন চাইলে আশ্রয় দিত, নইলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত। ছেলেমেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে আমরা জমিসহ ঘর পেলাম। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনদের আশ্রয় হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। পাশাপাশি চলাচলের সুবিধা উপযোগী সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় তারা আলোকিত পরিবার হয়ে উঠবে।

জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, দেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হচ্ছে নরসিংদী জেলায়। চার ধাপে মোট এক হাজার ১৬১টি ঘর দেওয়া হয়েছে। জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের শুধু ঘরই দেওয়া হচ্ছে না, তাদের কর্মসংস্থানও করছে জেলা প্রশাসন। তারা যাতে কাজ করে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে বাস করতে পারে, সেজন্য জেলা প্রশাসন কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।