ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুলভ মূল্যের মাংস, দুধ ও ডিমের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির পেছনে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দীর্ঘ সময় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে মানুষ এসব পণ্য কিনেছেন।
রাজধানীর ২০টি স্থানে কাভার্ডভ্যানে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। একাধিক স্থানে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় খামারবাড়ী মোড়ে দেখা যায়, মানুষ লাইন ধরে এসব খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করছেন। কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, গৃহবধূ থেকে শুরু করে চাকরিজীবী যুবক-বৃদ্ধ দুধ, মাংস ও ডিম সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
চাকরিজীবী আসফাক এলাহী লাইনের মাঝামাঝিতে ছিলেন। সকাল ১০টার মধ্যে দুধ, ডিম, মাংস কিনেছেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সুলভ মূল্যে বলা হচ্ছে, কিন্তু দাম তো কম নয়। পাশাপাশি পরিমাণও কম। তারপরও যেটি বিক্রি করছে, ভালো। কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে। সময় পেলে পরে আবারও আসবো।
ষাটোর্ধ্ব রওশনা আরা মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে পেয়ে বেশ খুশি। তিনি পাশেই মনিপুরি পাড়াতে ছেলের সংসার থাকেন। ছেলের সংসারে ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, মেয়ে এবং নিজে থাকেন। বেতন দিয়ে ছেলের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মাছ-মাংস প্রায় কেনা হয় না। আগে কম হলেও কেনা হতো, এখন দাম বেশি হওয়ায় গরুর মাংস তো কেনাই হয় না। কম দামে বিক্রি হচ্ছে জেনে এসেছি।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ১০টা ২০ মিনিটে হাতে মাংস পেয়েছেন। মুখে স্নিগ্ধ হাসি রওশন আরার। মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে পেয়ে রওশনারা খুবই খুশি।
মোহাম্মদপুরের গৃহবধূ আর্সিয়ানা বেগম সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম সংগ্রহ করতে পেরে খুশি। স্বামী চাকরি করেন। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে প্রাপ্ত আয় দিয়ে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে গেছে। কোনো না কোন দিকে খরচ কমাতে হয়েছে। সুলভ মূল্যের মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি হচ্ছে, শুনে মনে করেছিলাম একটি ভালো খবর। কিছুটা হলেও খরচ কমবে। দুধ-মাংস-ডিম পেয়েছি। তবে দাম সুলভ বলা হলেও প্রায় বাজারের মতোই। যদি দাম আরও একটু কম রাখা যেতো ভালো হতো। তবে সবই টাটকা মনে হচ্ছে। বাজারের চেয়ে ভালো।
সূলভ মূল্য হলেও রিকশাচালক ইমদাদের সে টাকাও নেই। রিকশা রেখেই মাংস, দুধ, ডিম দেখতে এসেছে। কাভার্ডভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন। আফিম উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, ইদ্রিস আলীও রিকশা দাঁড় করিয়ে এসব পণ্য বিক্রি দেখছেন। আজকে আমজাদ হোসেন ও ইদ্রিস আলীর এখনও মাংস ডিম কেনার মতো আয় হয়নি।
আফিম উদ্দিনের বিশ্বাস রিকশাচালকদের কাছে এসব মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করা হয় না। তাই কেনার জন্য টাকা আনেনি। তবে পাশে দাঁড়ানো অটোরিকশা চালক জানেন এ মাংস, দুধ, ডিম সবার জন্য।
এসব কাভার্ড ভ্যানে জনপ্রতি ১ কেজি গরুর মাংস, ১ কেজি মুরগির মাংস (চামড়া ছেলা), ১ লিটার দুধ ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬২০ টাকা, মুরগির মাংস ৩৪০ টাকা, ডিম ১২০ টাকা ডজন ও ১ লিটার দুধ ৮০ টাকা। একেবারে কম আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে মাংস ও দুধ আধা কেজির প্যাকেট করা হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে আধা কেজিও নিতে পারেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সহযোগিতায় এবার রমজান মাসে গরুর মাংস, মুরগি, দুধ ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল খামারবাড়ীর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
খামারবাড়ি ছাড়াও রাজধানীর আরও যেসব জায়গায় এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে সে স্থানগুলো হলো, নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী),আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচা বাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা) ও কামরাঙ্গীর চর।
প্রতিটি কাভার্ডভ্যান ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৮ কেজি খাসির মাংস, ৭০ কেজি মুরগির মাংস ও ২২০০ মুরগির ডিম বরাদ্দ পেয়েছে। ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিক্রি করছে। প্রতিটি ভ্যানে ৪ জন করে মানুষ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, ২৪ মার্চ, ২০২৩
জেডএ/জেএইচ