ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না!

লক্ষ্মীপুর: সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছেলে ফোন করেছে। বলেছে, ওমরাহ করতে যাবে।

তাই সবার কাছ থেকে দোয়া চেয়েছে, তাকে দোয়া করে দিছি। কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালেই তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।

বাংলানিউজের এই প্রতিনিধির কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় নিহত সবুজ হোসাইনের (৩০) বাবা মো. হারুন।

সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আভা এলাকায় মাহায়েল রোডের একটি ব্রিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওমরাহ যাত্রীবাহী একটি বাস উল্টে গিয়ে বাংলাদেশি ১৩ যাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ রায়পুর গ্রামের লাড়ি বাড়ির মো. সবুজ হোসাইনও ছিলেন।

তিন বছর দুই মাস আগে তিনি কর্মী ভিসায় সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি একটি খাবার হোটেলে কাজ করতেন। তার বাবা মো. হারুন একজন মাছ বিক্রেতা। পরিবারের বড় ছেলে সবুজের পাঠানো টাকায় চলতো তাদের সংসার।  

বুধবার (২৯ মার্চ) সকালে সবুজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকের মাতম। ছেলের শোকে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার বাবা মো. হারুন।  

ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবুজ প্রায় সময় ফোন দিয়ে তার খোঁজ-খবর নিতো। সে বলেছে, ওমরাহ করতে যাবে। সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমাকে ফোন দেয়। বলে, 'ওমরাহ করতে যাব, আব্বা আমাকে দোয়া করিয়েন'। আমি তাকে দোয়া করে দিয়েছি, কিন্তু সে ওমরাহ করতে গিয়ে লাশ হয়ে গেল। আমার ছেলে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না! 

মো. হারুন বলেন, তাকে দেশে আসতে বলেছিলাম, সে বলেছে, ধার-দেনা শোধ করে আরও কয়েক বছর পর আসবে।  

তিনি আরও বলেন, দেশে আসলে তাকে বিয়ে করাতাম। সংসারের বড় ছেলে ছিল সবুজ। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। একটি দুর্ঘটনায় সবুজের সঙ্গে আমাদের স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল।

নিহতের বাবা আরও বলেন, তিন বছর দুই মাস হলো সে সৌদিতে গেছে। একটি হোটেলে কাজ করতো। প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ঋণ এবং ধার-দেনা করে টাকা যোগাড় করেছি। তিন বছরেও সব টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। যে টাকা সে পাঠাতো, তা দিয়ে দেনা পরিশোধ করতাম, আর কিছু সংসারে খরচ করতাম। এখন আমার সংসারের কি হবে? ছোট ছেলে ফয়েজ হোসেন ঢাকার একটি কলেজের ক্যান্টিন বয় হিসেবে কাজ করে। আমি মাঝেমধ্যে মাছ ধরে বিক্রি করি। এটা দিয়ে তো আর সংসার চলবে না!

ছেলের মৃতদেহ যাতে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয় এবং সরকারিভাবে যেন তাদের সহযোগিতা করা হয়, সেই দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

সবুজের চাচা মো. বাচ্চু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সবুজেরা দুই ভাই, দুই বোন। পরিবারের অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না। সবুজ দেশে থাকতে একটি টেইলারিং দোকানে কাজ করতো। ধার-দেনা করে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়। বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্ব ছিল সবুজের ওপরেই। এখন তো সবুজ আর নেই, কি হবে তাদের সংসারের?

চরমোহনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিক পাঠান বলেন, সবুজের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশের আভা জেলায় একটি বাস দুর্ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ২৩ জন আহত হয়েছেন।

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ জন বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও ১৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।