ঢাকা: নওগাঁ থেকে আটকের পর হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর অভিযোগটি গুরুত্বসহকারে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল র্যাব সদর দপ্তর। এবার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে র্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত দল ঘটনাস্থলে গেছে।
র্যাব সূত্র জানায়, যেকোনো অভিযোগ তদন্তে র্যাব সদর দপ্তরের নিজস্ব ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল (আইইসি) রয়েছে। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তে সেই সেলের অধীনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৯ মার্চ) র্যাব সদর দপ্তরের গঠিত কমিটির সদস্যরা নওগাঁ পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। অভিযানে জড়িত থাকা র্যাবের ১১ সদস্যকে ডেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইছেন। এই কমিটি সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ, তাকে আটকের প্রক্রিয়া এবং সবশেষে অসুস্থ হওয়ার পর তার মারা যাওয়ার বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে।
র্যাব সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, র্যাব আইন মেনেই যেকোন অভিযান পরিচালনা করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটকের পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিন মারা যান। প্রাথমিকভাবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে র্যাবের অভিযানে কোনো দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।
তবে যেহেতু এটা নিয়ে একটি অভিযোগ উঠেছে, তাই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিয়েছে র্যাব সদর দপ্তর। ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেলের অধীনে গত ২৭ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি অভিযানে অংশ নেওয়া কোনো সদস্যের কোনো গাফিলতি আছে কিনা, বা কারো অনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখবে। তদন্তে কারো কোনো গাফিলতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ঘটনার বর্ণনায় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এনামুল ২০২২ সালের মার্চে একটি জিডি করেন। এমনকি একজন মহিলা তার নামে আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন মর্মে আদালতে একটি মামলাও করেন এনামুল।
সর্বশেষ গত ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুলের নাম-পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন এ প্রতারণায় আলামিন নামে একজন রয়েছে এবং তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জেসমিন নামে একজন। যার প্রেক্ষিতে ২২ মার্চ অফিস যাওয়ার সময় র্যাবের টহল টিম দেখে এনামুল এ বিষয়ে অভিযোগ করে সহায়তা চান।
এ প্রেক্ষিতে র্যাবের টিম এনামুলকে নিয়ে তার সামনে সুলতানা জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্য আরো দুজন সাক্ষীর সামনে র্যাবের নারী সদস্যরা জেসমিনকে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন সাক্ষীদের সামনে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জেসমিনের মোবাইলে এনামুলের নামে খোলা ভুয়া ফেসবুক আইডি চালু ছিল। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
সাড়ে ১১ টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামতসহ জেসমিনকে একটি কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। র্যাব সেখানে তার মোবাইলের বিভিন্ন আলামত প্রিন্ট করে। সকল আলামত সংগ্রহের পর র্যাব সদস্যরা তাকে নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য থানার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে জেসমিন অসুস্থ বোধ করলে তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই হাসপাতালে যান। পরে তার স্বজন ও সহকর্মীদের সান্নিধ্যেই তিনি সেখানে চিকিৎসা নেন।
সন্ধ্যার দিকে তিনি স্ট্রোক করতে পারেন এমন ধারণা করে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর র্যাব সদস্যরা তাকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরা। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন জেসমিনের মৃত্যু হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও বিষয়টি বের হয়ে আসবে। এরপরেও যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, আমাদের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, কমিটি কাজ করছে। তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কারো গাফিলতি পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
তথ্য-প্রমাণ পেয়েই জেসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি: যুগ্মসচিব
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
পিএম/এমজেএফ