ঢাকা: পথশিশুদের ৮২ শতাংশই ছেলে এবং মেয়ে ১৮ শতাংশ বলে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ ফলাফল প্রকাশ করে।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ মি. শেলডন ইয়েটের উপস্থিতিতে জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
পথশিশু জরিপ প্রতিবেদন ২০২২-এর ফলাফল তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, যথাযথ জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর পথশিশু জরিপ ২০২২ পরিচালিত হয়।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৮দশমিক ৩ শতাংশ পথশিশু রয়েছে। পথশিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়ে শিশু রয়েছে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী পথশিশু রয়েছে ৫৪ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে মেয়েদের তুলনায় ছেলে পথশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি, ১ জন মেয়ের বিপরীতে ৪ জন ছেলে শিশু। পথশিশুদের গড় বয়স ১২ দশমিক ৩ বছর।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, পথশিশুদের সর্ব্বোচ্চ ২০ দশমিক ৪ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সিলেট বিভাগের জেলাগুলো থেকে এসেছে।
এক্ষেত্রে পথশিশুর নিজ জেলা ময়মনসিংহ সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বরিশাল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোলা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, কুমিল্লা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জ ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং কক্সবাজার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ যথাক্রমে। প্রধানত ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ পথশিশু দারিদ্রতা, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বাবা-মা শহরে আসার কারণে এবং ১২ দশমিক ১ শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেছে। প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। ১০ পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর কেবল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্য সংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করেছে।
প্রায় চার ভাগের একভাগ পথশিশু ধূমপান করে এবং ১২ শতাংশ মাদকের নেশায় আসক্ত। ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না।
ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন (এনডিসি), বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পথশিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসাবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তুলে এনেছে।
এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এখন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা, গবেষক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন অংশীজন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ: ১৫৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
আরকেআর/এএটি