ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিরান বঙ্গবাজার পাহারায় একলা নিজাম

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
বিরান বঙ্গবাজার পাহারায় একলা নিজাম

ঢাকা: আগুনে পুড়ে অঙ্গার বঙ্গবাজার এখন শুধুই খোলা মাঠ। অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে সেখানে আপাতত দোকান করছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

ঈদের আগে যা কিছু পেরেছেন বিক্রি করে সে টাকা নিয়ে তারা নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেছেন। বঙ্গবাজার এখন ছুটি। কিন্তু এ ছুটি পালন করতে পারছেন না মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরী নিজাম গাজী। দায়িত্ব তাকে ছুটি নিতে দেয়নি।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বঙ্গবাজারের খোলা ময়দানে গিয়ে নিজামকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। পরিত্যক্ত স্থানে ব্যবসায়ীদের সাময়িক সময়ের বসার জন্য পাতা চৌকি গুলো পাহার দিচ্ছিলেন তিনি। কোন ব্যবসায়ী নেই, মালামালও নেই। তারপরও হেঁটে হেঁটে নিজাম দেখছিলেন কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা।

জানা গেল, দুই বছর আগে বঙ্গবাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে চাকরি পান নিজাম। এর আগে পটুয়াখালী জেলার বাউখাল থানায় নিজ বাড়িতেই থাকতেন। গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে মার্কেট সম্পূর্ণ পুড়ে গেলে নিজাম মুষড়ে পড়েন। কিন্তু মার্কেট প্রহরার দায়িত্ব থেকে তিনি সরে আসেননি।

নিজাম জানালেন, তিনিসহ আরও পাঁচ নিরাপত্তাকর্মী মার্কেট প্রহরার কাজ করতেন। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গেছেন একজন। বাকিরা দায়িত্ব পালন করছেন। ১২ ঘণ্টার শিফটে তারা কাজ করেন। আজ দায়িত্ব পড়েছে নিজামের কাঁধে।

তিনি বলেন, ঈদ-পূজা বা যেকোনো উৎসব, কেউ ছটি পায় কেউ পায় না। সবাই যখন ছুটিতে যায় আমরা থাকি মানুষের মালামাল পাহারায়। অন্যের আমানত রক্ষা করা বড় দায়িত্ব। ছুটি যে পাই না, তা না। তিন মাস পর পর একটানা ১০ দিনের ছুটি পাই। বেতন-বোনাস সময় মতো দেয় আমাদের। এত বড় আগুন লাগসে, মার্কে কর্তৃপক্ষ আমাগোরে বেতন-বোনাস সবই দিসে।

মার্কেট যেই কালে ছিল ভালোই ছিল। এখন তো সব পুইড়া গেসে। সবারই মন খারাপ, শোক পালন করতেসে। মার্কেটের উপরে আমাগো ঘর ছিল। খাওয়া দাওয়াও হইত। পুইড়া যাওয়ার পর ভগ্নীপতির বাসায় উঠছি।

তিনি জানালেন, প্রতি বছর ঈদ এলে দোকানিরা তাদের সালামি বা বখশিশ দিতেন। অর্থের পরিমাণও ভালো হতো। কেউ হাজার, কেউ ৫০০ করে টাকা দিতো ঈদের আগে। এবার পাননি। কিন্তু মন খারাপ নেই তার।

আগামী শনিবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীরা আসবেন না। সাধারণত ঈদের পর দেরিতেই ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান খুলতেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই হয়ত এবার আরও বেশি দেরি হতে পারে।

আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ঈদের কেনাকাটার জন্য বঙ্গবাজার থেকে মুখে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসলেও তেমন বেচাবিক্রি করতে পারেননি তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে বঙ্গবাজারে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মোট ৩০৩ কোটি টাকার। ব্যবসায়ীদের মালামালের ক্ষতি ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। বাকি ক্ষতি কাঠামোগত, পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মানবিক ও মানসিক বিপর্যয়জনিত ক্ষতির পরিমাণ এবং চাকরিহীনতার আর্থিক মাপকাঠি নিরূপণ করা দুরূহ বলেও উল্লেখ করা হয় এ প্রতিবেদনে।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের সব দোকান পুড়ে যায়। পাশের এনেক্সকো টাওয়ারসহ আরও কয়েকটিতে ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।