ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের খুশির রেশ কাটছেই না আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
ঈদের খুশির রেশ কাটছেই না আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের

গাইবান্ধা: কদিন আগেও যারা ছিলেন ভূমিহীন, দিন শেষে পরিবার নিয়ে রাত কাটতো অন্যের আশ্রয়ে, সেই মানুষ গুলো পেয়েছেন জমিসহ নতুন বাড়ি। সেখানে প্রথম ঈদ উদযাপনে মেতেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা, নতুন এ ঠিকানা তাদের জীবনে এনে দিয়েছে পূর্ণতা।

 

সোমবার  (২৪ এপ্রিল) বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের বাহিরডাঙ্গা গ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় বিস্তৃর্ণ সরকারি খাস জমিতে সাাঁরিবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কলোনি। সেখানে বসবাস করছেন ৬৯টি পরিবার। প্রত্যেক পরিবারের জন্য রয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর। রান্নাঘরসহ রয়েছে স্যানেটারি সুবিধা, আছে বারান্দও। সে বাড়িতে প্রথম ঈদ উদযাপন করছেন তারা। তাইতো ঈদ পেরিয়ে গেলেও আনন্দের রেশ কাটছে না তাদের। কাছের ও দূরের আত্মীয়-স্বজনরা নতুন ঠিকানায় আসছেন ঈদের দাওয়াত খেতে। পরিবার প্রধানরা কাজে না গিয়ে সময় কাটাচ্ছেন আপনজনের সঙ্গে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির প্রথম সারির একটি ঘরের বাসিন্দা নজিমন বেগম (৭৫)। নাতির ছেলে চার-পাঁচ বছরের মিশকাতকে নিয়ে এ ঘরে বাস করেন তিনি। নাতি মশিউর জীবিকার তাগিদে স্ত্রীসহ ঢাকায় আছেন। বিকেলে ঘরের বারান্দায় ঝোলানো দোলনায় মিশকাতকে বসিয়ে আদর করে দোল দিচ্ছেলেন নজিমন বেগম।   বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জীবনভর অন্যের আশ্রয়ে কেটেছে। শেষ জীবনে এসে নিজের স্থায়ী ঠিকানা খুুঁজে পেয়িছি। এ সুখের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।

সামনে অগ্রসর হতেই দেখা মেলে আ. মান্নান সরকার ও রাবেয়া বেগম দম্পতির। বাড়ির আঙিনায় বসে স্নিদ্ধ বিকেল উপভোগ করছেন তারা। বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় এক ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খেলা করছে। কাজে না গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগে বাড়িতে আছেন আ. মান্নান।

আ. মান্নান বলেন, আমাদের নিজস্ব জমি বা ঘর কিছুই ছিল না। মামা শ্বশুরের বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাসবাস করতাম। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘরহীন-ভূমিহীন মানুষদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ফলে আমাদের মতো ছিন্নমূল পরিবারগুলো সম্মানের সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে। এ ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। একই চিত্র আশ্রয়ণ কেন্দ্র জুড়ে। সবার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। তবে ছোট-খাট কিছু অভিযোগও আছে তাদের।

জহুরুলের স্ত্রী মমিনা বেগম বলেন, চাহিদার তুলনায় আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নলকূপ  কম বসানো হয়েছে। কেন্দ্রের ৪ থেকে ৬  ঘর এমনকি ৮ ঘরের জন্য একটি নলকূপ  বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে বেশ জটের সৃষ্টি হয়। পানির জন্য লাইন ধরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

আশ্রয় কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা মৃত জহুরুল ইসলামের স্ত্রী খোদেজা বেগম জানান, চাহিদার তুলনায় টিউবওয়েল সঙ্কটের পাশাপাশি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ব্যবহৃত পানি প্রবাহের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। কেউই তার ঘরের সামনে দিয়ে পানি প্রবাহে আগ্রহী নন। বিষয়টি আমাদের বেশ বেকায়দায় ফেলেছে।

এদিকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, মূল উঁচু সড়ক থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রবেশের ৩০ থেকে ৪০ ফুট রাস্তাটিতে মাটি কাটা জরুরি। সামান্য পানি হলেও রাস্তাটি ডুবে যায়। এতে যাতায়াতে বেশ বেগ পেতে হয়।

অন্যদিকে উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর (মধ্যপাড়া) আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শহিদা বেগম ও  রশিদা বেগম জানান, দুই বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হলেও সেখানকার  ৪টি পরিবারের জন্য এ পর্যন্ত কোনো নলকূপ বসানো হয়নি।

এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জানান, সরকারিভাবে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের প্রতি পাঁচ ঘরের জন্য একটি নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়ছে। আগামীতে নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাহিরডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

অপরদিকে মহদীপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর মধ্যপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ের তিনি বলেন, উদ্বোধন হয়েছে এমন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের নলকূপ বসানো হয়নি এমনটা হবার সুযোগ নেই। তবুও যদি এমনটা হয়ে থাকে খোঁজ নিয়ে দ্রুত নলকূপ বসানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ২৫ এপ্রিল ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।