লক্ষ্মীপুর: ‘আমার ভাইয়ের বুকে এতগুলো গুলি লেগেছে, আমার ভাইকে বাঁচানোর জন্য চতুর্দিকে চিৎকার দিয়েছি, হাহাকার করেছি। একটা মানুষও এগিয়ে আসেনি।
লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের পোদ্দার বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে জেলা যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম রুবেল ঘটনার রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন।
শুক্রবার (৫ মে) রাতে ঢাকায় বশিকপুরের ভাই ভাই মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির আয়োজনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও শোক সভার আয়োজন হয়। সেখানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন সাইফুল ইসলাম।
হাতের একটি ঘড়ি দেখিয়ে সাইফুল বলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত আমি দেখেছি। তার হাতে এই ঘড়িটা ছিল, এটা আমার হাতে আজ ১০ দিন। ঘড়িতে এখনো রক্ত লেগে আছে। আমি খুলিনি। ’
ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে রাকিবের ভাই সাইফুল বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ, আমার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই। আমি সন্ত্রাসীদের ভয় পাই না। কিন্তু এলাকার মানুষ কেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ভয়ে প্রতিবাদ করে না? আবুল কাশেম জেহাদীকে (হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও বাহিনী প্রধান) কেন ভয় পেতে হবে? আমার ভাইকে কেন মৃত্যুবরণ করতে হবে?’
আবুল কাশেম জেহাদীকে দলীয় পদ (চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) থেকে কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন রেখে রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল বলেন, ‘বার বার কাশেম জেহাদী সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে যাচ্ছে। কেন একজন সন্ত্রাসীকে বার বার এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করা হলো? তাকে শুধু সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হতো। ১৯৯৬ সাল থেকে এ অঞ্চলে ২৪টি খুন হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন কাশেম জেহাদীর বিরুদ্ধে একটি স্মারকলিপি দেয়। সেটা নিয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব, আমার ভাইয়ের খুনের বিচারের জন্য। ’
ভাইয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করে তিনি বলেন, খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই, তাদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আশাকরি এলাকাবাসী আমার সঙ্গে থাকবে।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের পোদ্দার বাজারে গত ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম।
এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীকে প্রধান আসামি করে আরও ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রধান আসামি আবুল কাশেম জেহাদীকে এখনবধি গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট হত্যা মামলাটি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
আরও পড়ুন নোমান-রাকিব হত্যা: ৫ গ্রুপে ভাগ হয়ে যায় হত্যাকারীরা
নোমান-রাকিব হত্যার দায় স্বীকার করলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
নোমান-রাকিব হত্যা: ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর
জেহাদীর মদদেই নোমান-রাকিবকে হত্যা
লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় আরও ৪ আসামি আটক
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
এসএএইচ