ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরলেন মেয়র খালেক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরলেন মেয়র খালেক

খুলনা: বিগত ৫ বছরে খুলনা মহানগরীর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।

বুধবার (১০ মে) দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিটি মেয়র নগরবাসীকে মহানগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।

এ সময় মেয়র বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে বিগত ৫ বছরে আমাদের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নগরবাসীকে অবহিত করতে চাই।

মেয়র বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহের অন্যতম। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে কেসিসি’র স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও কেসিসিকে সহায়তা করছে। নগর স্বাস্থ্য ভবনে প্রতিদিন বিনামূল্যে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি  ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার’ প্রকল্পের আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।  

এছাড়া কেসিসি পরিচালিত নগরীর লাল হাসপাতাল ও তালতলা হাসপাতালে প্রতিদিন গড় হিসেবে প্রায় ১০০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশন ও নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা রয়েছে। কুকুর ও অন্যান্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে সামান্য ফি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। ‘হেলদি সিটি’ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনাকে একটি আধুনিক, স্মার্ট, সবুজ, স্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।

খালেক বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কাজের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ যা সরাসরি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভর করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ‘কেসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন এবং এরই মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড়কৃত অর্থ দ্বারা প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন, রোড সুইপিং মেশিন, লংবুম  স্কেভেটর, ১০ চাকার গার্বেজ ট্রাক, পে-লোডার ক্রয় করা হয়েছে। কম্পাক্টর ট্রাক ও ভাসমান এস্কেভেটর ক্রয়ের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যা দ্বারা শহরের ময়লা দ্রুত অপসারণ ও ময়ূর নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য ভাসমান এস্কেভেটর কাজে লাগানো হবে।

মেয়র আরও বলেন, শিশু ও সাংস্কৃতিক শাখা সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম একটি সেবাখাত। শিশুদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের জন্য এ শাখার মাধ্যমে নগরীতে ৪৩৬ টি মসজিদ ভিত্তিক মক্তব পরিচালনা করা হয়। আগে মক্তবের শিক্ষকদের মাসিক ১ হাজার ৭০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হতো যা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২০০ টাকায় উন্নীত করেছি। মক্তব ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কেসিসি উইমেন্স কলেজ, খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল, ইসলামাবাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম), নয়াবাটী হাজী শরিয়তউল্লাহ বিদ্যাপীঠ, কেশব চন্দ্র সাংস্কৃতিক কলেজসহ ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহানগরীর শিক্ষা বিস্তারে, বিশেষ করে নারী শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ভারত সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুলকে একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলমান আছে।

মেয়র বলেন,  ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনকি মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেন। খুলনা  সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৭ হাজার টাকা। মহানগরীর ৫৭১টি সড়ক উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ৪১৮টি সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে, চলমান আছে ১১৪টি এবং টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমাণ আছে ৩৯টি সড়ক।

দ্বিতীয় প্রকল্পটির শিরোনাম হচ্ছে ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮২৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। মহানগরীর ২০৬টি ড্রেন উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার মধ্যে ৫২টির কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং চলমান আছে ৮৫টি ড্রেনের কাজ। টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমাণ আছে ৭২টি।

এছাড়া ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থোক বরাদ্দ হিসেবে পাওয়া যায় ৪৯ কোটি ৮২ ল টাকা। উক্ত টাকায় ইতোমধ্যে ৬’শ ৪৭টি প্রকল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে এবং অপোয় আছে আরো ১’শ ২৪টি প্রকল্প।

বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)’র অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগিতায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’’ প্রকল্পের আওতায় বিগত ৫ বছরে ৩৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫’শ ৮৭টি পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে স্বস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা প্রদানসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্নআয়ের বসতি এলাকায় ৪৯.১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের (৮ ফুটের কম প্রশস্তের) প্রায় ১ হাজার ৩’শটি সড়কসহ ড্রেন ও ১২টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন এবং ১ হাজার ৫০৪টি পারিবারিক ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে।

ব্রাক-আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে ৬৮টি পরিবারের জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ শহিদ হাদিস পার্কে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।

জার্মান কোঅপারেশনের (জিআইজেড) অর্থায়নে ১১৪টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ৬৪৩টি ছাগল বিতরণসহ ছাগল পালনের অবকাঠামোগত সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার ও জার্মান সরকারের (কেএফডব্লিউ) যৌথ অর্থায়নে ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি মোকাবেলায় খুলনা শহরের উন্নয়ন (ফেজ-২)’’ শীর্ষক ৪’শ ৯১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার একটি প্রকল্প চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর দৌলতপুর ও মহেশ্বরপাশায় শহর রক্ষা বাঁধ; রূপসায় রিভার ফ্রন্ট পার্ক; দেয়ানা চৌধুরী খাল খনন ও পাড় বাধাইসহ নবীনগর, বাস্তুহারা ও সোনাডাঙ্গা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ড্রেন উন্নয়ন, আলুতলা স্লুইচ গেট আধুনিকায়ন, নিরালা খাল খনন, পাড় বাধাই ও উভয় পার্শ্বে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ ২৩টি পুকুরের উন্নয়ন করা হবে।

এছাড়া নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় ‘ওয়াটার এজ লেভারেজ, ন্যাচারাল ড্রেনেজ সলুশন ফর খুলনা সিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ময়ূর, খুদে ও শোলমারী নদীসহ সংযুক্ত খালসমূহ সংরক্ষণ, স্লুইস গেট ও পাম্প হাউজ নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই; জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থায়নে নগর বনায়ন কর্মসূচি; ইউএস-এইড এর অর্থায়নে ‘এশিয়া রিজিলিয়েন্ট সিটিস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টেকসই নগর উন্নয়নে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে অর্থায়ন এবং জার্মান সরকারের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা কারিতাস-এর মাধ্যমে নগরীতে ‘স্ট্রেনদেনিং রিজিলাইন্ট লাইফ অ্যান্ড লাইভলিহুড ফর কাইমেট মাইগ্রেন্টস ইন আরবান স্লামস অব কেসিসি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় লিংক রোড নির্মাণ, পানির উৎস মেরামত, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুরের আবাসন সংস্কারসহ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কার্যক্রম চলমান আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩

এমআরএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।