ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘জিয়ার নির্দেশে’ নাজমুল হুদাকে হত্যা, মেয়ের মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
‘জিয়ার নির্দেশে’ নাজমুল হুদাকে হত্যা, মেয়ের মামলা

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর শহীদ এ সেনা সদস্যের মেয়ে নাহিদ ইজহার খান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নির্দেশে নাজমুল হুদার হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে মামলা আসামি ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আব্দুল জলিল।

জানা গেছে, ‘জিয়ার নির্দেশে’ নাজমুল হুদা হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল মেজর (অব.) আব্দুল জলিল কেবল বেঁচে আছেন। অন্যান্য নামীয় আসামিরা বিভিন্ন সময় মারা গেছেন।

এজাহারে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমার বয়স তখন পাঁচ বছর; আমার বড় ভাইয়ের বয়স ৮ বছর। তখন আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ কমান্ডার। তিনি রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী, বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে তিনি নিহত (শহীদ) হন। তার সাথে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ, বীর উত্তম এবং শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ.টি.এম হায়দার, বীর উত্তমও নিহত (শহীদ) হন।

পরবর্তীতে আমরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারি, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে বাবাসহ অপর দুই সামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে। যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে অবস্থান করছিল। সকালে বাবা ও তার দুই সহকর্মী নাস্তা করা অবস্থায় দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে একটি টেলিফোন আসে- দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে। এরপর বাবাসহ অপর দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা।

আমাদের অনুসন্ধানে আমরা আরও জানতে পারি তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জাসদের নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকরা সংঘবদ্ধভাবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) ও মেজর মুকতাদির, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আমরা আরও জানতে পারি দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব.) এ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়নেট চার্জ করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাবা যোগদান করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। তার সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বিখ্যাত গরিবপুরের ট্যাঙ্ক যুদ্ধ, চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল এবং ৬ ডিসেম্বর বাবার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসাবে যশোর মুক্ত হয়। আমাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল, একবার অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে আমার ভাই গিয়েছিল বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি ভাইয়ের আবেদন পত্র হাতে নিয়ে আমার বাবার নাম দেখে ভাইকে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আছে। সকল দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই আমি আমার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করছি।

সরকারের কাছে আবেদন এ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট তদন্ত করে দোষীদের বিচার অনতিবিলম্বে করা হোক।

গতকাল বুধবার (১০ মে) রাতে শেরেবাংলানগর থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান কর্তৃক দায়েরকৃত মামলাটি (নং-১৮) আমরা তদন্ত করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।