ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হয়রানি ও চাকরিচ্যুতি বন্ধসহ ১৩ দাবি ট্যানারি শ্রমিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
হয়রানি ও চাকরিচ্যুতি বন্ধসহ ১৩ দাবি ট্যানারি শ্রমিকদের

ঢাকা: ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের অসৎ উদ্দেশ্যে হয়রানি ও চাকরিচ্যুতি বন্ধসহ ১৩ দাবি জানিয়েছে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। রোববার (১৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, সম্পূর্ণ দেশিয় কাঁচামাল নির্ভর চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পখাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণেও চামড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু এই শিল্পের শ্রমিকরা শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। চাকরিচ্যুতির পাশাপাশি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে কোনোমতে টিকে আছে শ্রমিকরা।

তিনি আরও বলেন, বিপুল সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও চামড়া শিল্পের বিরাজমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। সিইটিপি ও স্যোশাল কমপ্লায়েন্স জনিত সমস্যার কারণে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ভালো বায়ার (ক্রেতা) বাংলাদেশ থেকে চামড়া ক্রয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চামড়া শিল্পের মালিকদেরও দায় রয়েছে। নতারা সমস্যার গভীরে না গিয়ে ব্যবসা মন্দার অজুহাত দেখিয়ে ক্রমাগত স্থায়ী ও দক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করছে। যা চামড়া শিল্পের সুফল বয়ে আনবে না।

তাই চামড়া শিল্পে রিরাজমান সংকট কাটিয়ে উঠতে ১৩ দফা দাবি জানান তিনি।

তাদের দাবিগুলো হলো-

* বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য দ্রুত নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন এবং নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও ঘোষণা করা।

* সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এবং সিবিএ চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য যে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, এর কম মজুরি দিয়ে কোনো শ্রমিক নিয়োগ না করা।

* ট্যানারি কারখানাগুলোতে শ্রম আইনের সব ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র ছাড়াকোনো শ্রমিক নিয়োগ না করা।

* শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেইফটি কমিটি গঠন ও কার্যক্রম জোরদার এবং পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

* চামড়া শিল্প নগরীতে অবিলম্বে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এবং শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।

* প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

* সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সিইটিপিকে পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ অর্জনের পথ অগ্রসর করা।

* অসৎ উদ্দেশ্যে শ্রমিক হয়রানি ও চাকরিচ্যুতি বন্ধ করা।

* অবিলম্বে মধ্যস্বত্বভোগী কন্ট্রাক্টর বা ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো বন্ধ করা।

* আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন দ্বারা স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চায় প্রশাসনিক এখতিয়ার বর্হিভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

* ট্যানারী শিল্পের জন্য গৃহীত 'ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন' অর্থাৎ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

* ট্যানারি শিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনা।

* ট্যানারি শিল্পে কর্মরত সব শ্রমিকদের হ্রাসকৃত মূল্যে চাল, ডাল, তেল, আটা, লবন, চিনি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকার ও ট্যানারি মালিকরা এসব দাবি মেনে না নিলে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।

এ সময় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিনসহ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) ও বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলই) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
এসসি/এমএমজেডে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।