ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অপরিকল্পিত ইউটার্ন-বাসের দৌরাত্ম্য, প্রগতি সরণিতে ভোগান্তি

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
অপরিকল্পিত ইউটার্ন-বাসের দৌরাত্ম্য, প্রগতি সরণিতে ভোগান্তি ছবি: ইফফাত শরীফ

ঢাকা: যানজট হ্রাসে গণ-পরিবহন যেখানে দেশের মেরুদণ্ড হওয়ার কথা, সেখানে ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথাটি বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান।

রাজধানীর অপরিকল্পিত ইউটার্ন-ইউলুপ, গণ-পরিবহন বিশেষ করে বাসের দৌরাত্ম্য সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান এ কথা বলেন।

কেন বুয়েটের এ শিক্ষক কথাটি বলেছেন; বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোয় বরফের মতো জমে থাকা যানজট- এ কারণে মানুষের সময় ব্যয়, অর্থ নষ্ট, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি; যা একটি দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করে।

উদাহরণ হিসেবে রাজধানীর প্রগতি সরণি তথা কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-গুলিস্তান রুটটির দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রায় সারাদিনই এ সড়কে যানজট লেগে থাকে। অথচ সামগ্রিক দিক থেকে এ রুটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাজধানী ও এর বাইরে থেকে আসা অসংখ্য মানুষ নানা প্রয়োজনে এ রুটে চলাচল করেন। যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন এ রুট সংশ্লিষ্ট মালিবাগ রেল-গেট ও কুড়িল বিশ্ব রোড পর্যন্ত বহু ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এতে তাদের যেমন সময় নষ্ট হয়, ক্ষতি হয় শরীরের।

প্রগতি সরণি রুটটি মাত্র ১১ কিলোমিটারের। লম্বা সড়কটিতে সরাসরি চার রাস্তার মোড় নেই। তবে মালিবাগ রেল-গেট ও আবুল হোটেলের সামনে তিন রাস্তার দুটি ট্রাফিক ক্রসিং আছে। পুরো সড়কে রয়েছে আটটি ইউটার্ন ও দুটি ইউলুপ ফ্লাইওভার রয়েছে। এছাড়া হাতিরঝিল, গুলশান-১ এবং গুলশান-২ এলাকায় রয়েছে মোট তিনটি তিনটি সংযোগ সড়ক।

গুরুত্বপূর্ণ এ রুটটিতে জন সাধারণের ভোগান্তি চরমে। কারণ, রামপুরা-কুড়িল রোডে যত্রতত্র বাস থামানো হয়। রাস্তার মাঝে হয় যাত্রী তোলা-নামানোর কাজ। এতে বিপাকে পড়ে অন্যান্য যানবাহনগুলো। দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও ব্যাপক। অতীতেও এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অতিরিক্ত আয়ের আশায় বাস চালক-হেলপাররা এমন অসঙ্গতি ঘটিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ সবার।

সরজমিন রাজধানীর রামপুরা সড়ক ঘুরে দেখে বাংলানিউজ। দেখা গেছে, সড়কটিতে চলাচলরত অনাবিল, রাইদা, অছিম, হিমালয়, তুরাগ পরিবহণের বাসগুলো বিভিন্ন জায়গায় থামিয়ে যাত্রী তোলা-নামা করছে। সরকার বাস স্টপেজ নির্ধারণ করে দিলেও এসব পরিবহনের চালক-হেলপাররা তা মানে না। কিছু কিছু জায়গায় এমনভাবে বাস থামানো হয়, সামনের দিকে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেলেও পেছনের দিকে লেগে যায় দীর্ঘ জট।

গণ-পরিবহনের এমন অব্যবস্থাপনায় গতি নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল পেছনের যানবাহনগুলো। এ সড়কে চলাচলরত ছোট ছোট পরিবহনগুলোর চালকরা জানান, প্রতিদিনই তাদের এ ভোগান্তি পোহাতে হয়। তা ছাড়া বাস গুলো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে আবার নামিয়ে দেয়। ফলে ফুটপাত থেকে মাঝ রাস্তায় বাস পর্যন্ত যেতে সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হয় দ্রুতগতিতে আসা অন্য যানগুলোর সামনে। এতে তাদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা দুই পরিবহনের চালকদের প্রতিযোগিতা। এতে দুর্ঘটনার ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি হয়। অতীতে এমন ঘটনা দেখেছে দেশবাসী।

যত্রতত্র যাত্রী তোলা-নামানোর কাজ বহুদিনের। সেটি শুধু মাত্র এ সড়কেই নয়, রাজধানীর সবগুলো সড়কেই কম-বেশি দেখা যায়। এমন অব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সতর্ক করেন, কোনো কোনো সময় জরিমানা করেন। কিন্তু তাতেও সমাধান নেই। কেননা, চালক-হেলপাররা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তারা ট্রাফিক সদস্যদের পাত্তা দেন না। কারণ, চা-পানি খাওয়ানোর জন্য তারা ট্রাফিক সদস্যদের ‘সম্মান’ করেন। কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবহন মালিকরা ট্রাফিক পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের ‘সিস্টেম’ করেন।

আবার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কোনো বাসকে জরিমানা করলে চালক-হেলপারদের দাবি, তারা সঠিক নিয়ম পালন করেন। কিন্তু পুলিশ ইচ্ছা করেই মামলা-জরিমানা করে। গতকাল সোমবার (১৫ মে) এমই চিত্র দেখা যায় কুড়িলের একটি শপিং মলের সামনে। ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-১৮৯৫ নম্বরের অনাবিল পরিবহনের একটি বাস মাঝ রাস্তা থেকে যাত্রী তুলছিল। এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ বাসটিকে থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, এবং আইন অনুসারে জরিমানা করেন। পরে বিষয়টি সম্পর্কে বাস চালক মো. আলী হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়। আলী জানান, নিয়ম মেনেই তিনি বাস চালাচ্ছিলেন, কিন্তু পুলিশ অযথাই তাকে জরিমানা করেছে।

কিন্তু যখন তার আইন ভাঙার বিষয়টি ছবিসহ তাকে দেখানো হয়, আলী হোসেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। কাতর কণ্ঠে বলেন, সারাদিন গাড়ি চালাইয়া জমার টাকা উডাইতে কষ্ট হয়। পকেটে কিছু থাকে না। রাস্তা থেইকা যাত্রী না উডাইলে পোষাইতে পাড়ি না। এখন সব কিছুর দাম বাইড়া গেসে, আমগো তো খাইয়া বাইচা থাহন লাগবো।

সেই বাসটিতে ওঠা যাত্রীদের প্রশ্ন করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক ছাত্র বলেন, কিছু করার নেই। মাঝ রাস্তা থেকে না উঠলে বাস পাওয়া কষ্টকর। তা ছাড়া আমরা রাস্তার দুদিক দেখেই উঠি। দেশের সড়ক পরিস্থিতি ভালো না। আমাদের আর কিছু করার নেই।

রামপুরা-কুড়িল রুটে কাউন্টার ও লোকাল বাস চলাচল করে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে যাত্রী নেয় এমন বাসগুলোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছাড়া আর তেমন অনিয়মের কথা শোনা যায় না। যত সমস্যা, সব লোকাল বাসগুলোই করে থাকে। এমন নজির সবখানেই পাওয়া যায় বলে জানান যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্টার বাস চালকদের বেশিরভাগই বেতনভুক্ত। মতিঝিল থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত একবার আসা-যাওয়া করলে তারা ৪৫০ টাকা করে বেতন পায়। তাই তাদের যেখান-সেখান হতে যাত্রী নেওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু লোকাল বাস চালকরা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে। যে হিসেবে বাস চালিয়ে আয় করে তারা। এতে জমার টাকা, সারাদিনের খরচ, সংসার খরচ, উপরির টাকার কথা চিন্তা করতে হয় তাদের। যে কারণেই যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা, নামানো; অন্য বাসের আগে যেতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা; আড়াআড়িভাবে সড়কে বাস রেখে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাখে। এ চিত্র শুধু রামপুরা-কুড়িল রুটেই নয়, রাজধানীর সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই দেখা যায়।

আবার লোকাল বাসের হেলপারদের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। তারা জোর করে যাত্রী তোলে। নারীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে।

সড়কের এসব বিশৃঙ্খলার বিষয়ে কথা হয় মধ্য বাড্ডা ইউটার্নের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলিউজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজেক বলেন, আমাদের অল্প সংখ্যক ট্রাফিক ফোর্স দিয়ে এত বড় রাস্তা কন্ট্রোল করা আসলে সম্ভব না। ম্যানপাওয়ার বেশি থাকলে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে সুবিধা হয়।

বেশিরভাগ সময় দেখা যায় রাস্তায় যে অংশে ট্রাফিক পুলিশ থাকে, সেখানে চালকরা সতর্ক হয়ে চলে। কিছুদূর গিয়ে তিনিই আবার আইন ভাঙেন। বিশেষ করে ক্রসিংগুলোয় (ইউটার্ন বা চার রাস্তার মোড়) রাস্তা ব্লক করে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। এমনকি জেব্রা ক্রসিংগুলোয় বাস ড্রাইভাররা যাত্রী তোলে আবার নামায়। আমরা যতই মামলা করি বা রেকার দিই না কেন; এসব বাস ড্রাইভারদের স্বভাব ঠিক হয় না।

আলিউজ্জামান আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একই কোম্পানির গাড়ি বা একই রুটে অন্য কোম্পানির গাড়ি চালকদের মধ্যে এক প্রকার প্রতিযোগিতা হয়। কে কার আগে যাত্রী ওঠাবে। কে কার আগে যাবে, কেউ কাউকে জায়গা দেয় না। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। যানজটও হয় ব্যাপকভাবে।

লোকাল বাস চালকদের এমন বিশৃঙ্খলায় নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়েন অন্যান্য যান চালকরাও। এ বিষয়ে কথা হয় রামপুরা-নতুন বাজার রোড়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী হোসেন সবুজ নামে এক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার বাসা বাসাবো। অফিসের কাজে নিয়মিত নতুন বাজার যাতায়াত করতে হয়। এ রোডের সবচেয়ে বেশি জ্যামে পড়তে হয় রামপুরা ব্রিজ, মধ্য বাড্ডা ও নতুন বাজারে। দেখা যায়, ড্রাইভাররা প্রতিনিয়ত রাস্তার মাঝে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে। এতে পেছনে লম্বা জ্যাম সৃষ্টি হয়। সামনের রাস্তা কিন্তু পুরো ফাঁকা থাকে। অযথাই অনেকক্ষণ জ্যামে পড়ে থাকতে হয়।

সড়কের যানজট ও অব্যবস্থাপনা কীভাবে কমান যায় এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে অব্যবস্থাপনা। আমাদের সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলে। ছোট, মাঝারি, বড় ও দ্রুতগতির যান চলে। রাস্তায় আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক গতিকে ধরে রাখতে চাই তাহলে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের যে ক্যাটাগরি, সেটি কমিয়ে আনতে হবে। এগুলো যদি বিদ্যমান থাকে, একসঙ্গে চলে তাহলে কোনোভাবেই অব্যবস্থাপনাগুলো কমবে না।

ঢাকা শহরে আমাদের গণ-পরিবহনের যে ধরনের পরিবর্তন আসার কথা ছিল, তা আসেনি। আর চালক যারা আছে তাদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এসব চালকের সিংহভাগ অ-বেতনভুক্ত। বেশিরভাগই চুক্তিভিত্তিক। এসব চালকদের মধ্যে যে অসম ও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে; সেটাই মূলত যানজটের প্রধান কারণ হয়ে উঠছে। এটা করতে গিয়ে তারা (বাস ড্রাইভাররা) সড়কের যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা করায়। ফলে সড়কে যানজট হচ্ছে। এসব গণ-পরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলা ও এক ছাতার নিচে আনতে হলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের যে মডেল আছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ মডেল বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আমাদের দেশে এ মডেল ইমপ্লিমেন্ট করতে বাস মালিকদের অসহযোগিতা আছে। যারা বাস্তবায়ন করছেন তাদের মধ্যেও যথেষ্ট সদিচ্ছার অভাব আছে।

সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার, প্রশ্ন করলে ড. হাদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের একটা শহরে চার হাজার বাস চললে এর মালিকই থাকে দুই হাজার। অর্থাৎ ফ্রাগমেন্টেড ওউনারশিপ যতদিন পর্যন্ত একটা ছাতার নিচে না নিয়ে আসা যায় (বাস ফ্রাঞ্চাইজি) তাহলে এর দায়িত্ব কেউ নেবে না।

তিনি বলেন, বাসের মালিকরা আমাদের রোড ট্রান্সফার অথরিটি কমিটির অনুমতি নিয়ে গাড়ি নামাচ্ছে। তারাও অনুমতি দিয়ে কিন্তু ছেড়ে দিচ্ছে। যদিও পরিবহন মালিকদের রোড পারমিট দেওয়ার সময় পার্কিং ব্যবস্থার কথা বলা হয়। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কিনা, দেখা হয় না। আবার ঢাকা শহরে বাস রাখার জন্য পার্কিং কোথায় পাবে? তাই মালিকরা রাস্তার ওপর পার্কিং করে। তারমানে নজরদারি বা দেখভাল করার মতো কেউ নেই। এই বিষয়গুলোকে যদি একটি সিস্টেমের মধ্যে আনা যায়, তাহলে দেখা যাবে গণ-পরিবহনের একটা কমিটি তৈরি হবে; যারা বাস পরিচালনা কীভাবে হচ্ছে তা দেখভাল করতে পারবে।

একটি আদর্শ নগরীতে এ ধরনের ব্যবস্থা সাধারণত সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সিটি কর্পোরেশন এর একটা কমিটি থাকবে, যারা প্রতিদিন এই অপারেশন কীভাবে হয় সেটি তদারকি করবে। তবে বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা না থাকায় বাস মালিকদের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই বাসের জন্য একটা ফ্রাঞ্চাইজি করা দরকার।

ইউটার্ন বা ইউলুপ যানজট সমাধানের প্রধান উপায় না বলেও মন্তব্য করেন বুয়েটের এ শিক্ষক। ড. হাদিউজ্জামান বলেন, আমাদের নগরে অনেক ইউটার্ন আছে; যা অবৈজ্ঞানিক বা অপরিকল্পিত। এটার কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং নেই। যখনই মনে হয়েছে একটা ইউটার্ন দরকার, দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউটার্নের লোকেশন কোথায় হবে এটার জন্য একটা বিজ্ঞান আছে। বিশেষ করে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার যারা তারা এটাকে অনেক হিসাব-নিকাশ করে বের করে। ইউটার্ন নেওয়া যানবাহন ও সোজা যাওয়া বাহনের মধ্যে একধরনের ক্রসিং থাকে। এই ক্রসিং কমানোর জন্য ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারের দরকার। তিনি জানেন কোথায় ইউটার্ন দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে নন-প্রফেশনাল লোকজন এগুলো করে থাকে। প্রফেশনাল লোকের অভাবে এ ধরণের ইউটার্ন আমাদের দেশের হিতে বিপরীত হয়েছে।

যানজট কমাতে হলে ঢাকা শহরে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় একটা ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং উইং তৈরি করতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার দিতে হবে। একটা নগরকে টেকসই করতে হলে প্রতি ২৫ হাজার যানবাহনের জন্য একজন করে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে ঢাকায় প্রায় ৬০০ ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার আছে মাত্র চার থেকে পাঁচ জন। তার ওপর তারা পেশাদার নন। কারণ, পেশাদার হতে হলে সেই ইঞ্জিনিয়ারকে প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে অনুশীলনের জন্য সড়কের কোনো ব্যাকরণ নেই, তাই তারাও ভালোভাবে যানজট নিরসনের জন্য প্র্যাকটিস করতে পারছেন না। বেশিরভাগ সময় তারা সরকারি ফাইল ম্যানেজে ব্যস্ত থাকেন। ফাইল ম্যানেজ করলে তো আর রাস্তা ম্যানেজ করা যায় না। এজন্য আমাদের দেশে যথেষ্ট ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার দরকার, যারা সড়কের ডাক্তার হবেন।

পৃথিবীর সব দেশে গণ-পরিবহন হচ্ছে সে দেশের যানজট কমানোর মেরুদণ্ড। সেখানে বাংলাদেশে গণ-পরিবহন যানজটের একটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা খুবই হতাশাজনক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।