ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অস্ত্রোপচারের পর যমজ নবজাতক উধাও নিয়ে ধুম্রজাল, তদন্তে পুলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
অস্ত্রোপচারের পর যমজ নবজাতক উধাও নিয়ে ধুম্রজাল, তদন্তে পুলিশ

রাজশাহী: রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যমজ নবজাতক চুরির অভিযোগ উঠেছে। তবে চিকিৎসকের দাবি, অস্ত্রোপচার করতে আসা ওই রোগীর পেটে কোনো বাচ্চাই ছিল না।

 

এ নিয়ে দুই দিন ধরে তোলপাড় চলছে গোটা রাজশাহীতে। তবে ঘটনাটি এখনো খোলসা না হওয়ায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।  
থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ হলেই ঘটনার সত্যতা সবার সামনে বেরিয়ে আসবে।

জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মো. পিয়াসের স্ত্রী সৈয়দা তামান্না আখতার। গত ১৮ মে দুপুরে এই নারীর প্রসব বেদনা ওঠে। নয় মাসের গর্ভবতী তামান্নাকে এ সময় তার স্বজনরা নগরীর বেসরকারি রয়েল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করার পর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তড়িঘড়ি করে তামান্নাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা তার স্বজনদের জানান, তামান্নার পেটে কোনো বাচ্চা নেই!

এ কথা শুনে প্রসূতির স্বজনদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তারা হট্টগোল শুরু করেন। তাদের দাবি, তামান্নার যমজ সন্তান চুরি হয়েছে। কারণ তামান্না আখতার গর্ভধারণের পর থেকেই গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শে চলতেন। ওই চিকিৎসক তামান্নাকে জানিয়েছিলেন, তার পেটে যমজ শিশু আছে। তাই হঠাৎ প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রয়েল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তামান্না আখতার জানান, তিনি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গর্ভধারণের পর থেকেই তিনি নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তার গর্ভে দুটি বাচ্চা ছিল বলে সেই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। আর আলট্রাসনোগ্রামেও দেখা গেছে, যমজ শিশুর মধ্যে একটি ছেলে, একটি মেয়ে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে অ্যানেস্থেসিয়া পুশ করা হয়। তবে ওটিতে থাকার সময় তিনি বুঝতে পারেন যে, তার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছে। তার কাছে স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বাচ্চা টেনে বের করা হচ্ছে। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। অথচ জ্ঞান ফেরার পর তাকে জানানো হয় যে, তার পেটে নাকি কোনো বাচ্চাই ছিল না।  

তিনি দাবি করে বলেন, এটা মিথ্যা কথা, এমনটা কিছুতেই হতে পারে না।

তার অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. নিশাত আনাম বর্ণার দাবি, ওই রোগীর পেটে বাচ্চা ছিল এমন কোনো চিকিৎসাপত্র রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারেননি। তামান্না গর্ভধারণের সব উপসর্গ নিয়ে রয়েল হাসপাতালে যান। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। আর এ জন্যই তাকে দ্রুত ওটিতে নেওয়া হয়। কিন্তু তার পেটে কোনো বাচ্চা পাওয়া যায়নি।  

এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ লোকজন হাসপাতালে নবজাতকের সন্ধানে তল্লাশি করার সময় অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমনের ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করেন। যদিও পরে তা সরিয়ে ফেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী বলেন, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি মামলা আকারে নথিভুক্ত হবে। তবে তার আগে আমরাও কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। আমরা এরই মধ্যে ডা. নিশাতের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ওই প্রসূতির পেটে বাচ্চা ছিল না। তবে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুরো রহস্যটি উন্মোচনে পুলিশ কাজ করছে।  

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী নারী যেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়েছেন, পুলিশ সেখানকার প্রতিবেদন সংগ্রহেরও চেষ্টা করছে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।  

কিছু জানতে পারলে তা পরে জানানো হবে বলেও জানান রাজপাড়া থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এসএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।