ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাবনা কতটুকু?

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাবনা কতটুকু?

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামনে চলে এসেছে নির্বাচনকালীন সরকারের আলোচনা। গত ১৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বিষয়টি সামনে আসে।

 

তাই আগের মতো এবারও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হতে পারে এই নির্বাচনকালীন সরকার।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের (দশম সংসদ) আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়। ওই সরকারে বিএনপিকে আসার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, দলটি আসেনি। তখন আওয়ামী লীগসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের এমপিদের নিয়ে গঠন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার।  

ওই সরকারে কোনো টেকনোক্রেট মন্ত্রী রাখা হয়নি এবং মন্ত্রীসভার আকারও ছোট করা হয়।  

গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অবশ্য নতুন করে কোনো মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকেও মন্ত্রী করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ওই সরকারই দায়িত্ব পালন করে।

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই বিগত যে দুটি নির্বাচন হয়েছে, দুটি সরকারেই সংসদে থাকা অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিগত দুটি সরকারের প্রথম ৫ বছরের মেয়াদে জাতীয় পার্টি থেকে একজন ও সাম্যবাদী দল থেকে একজন করে মন্ত্রীও ছিলেন।  

এরপর দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রীসভায় জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) সদস্যরাও ছিলেন।  

কিন্তু বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রীসভাতে শুধু আওয়ামী লীগের সদস্যরাই রয়েছেন। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলো থেকেও প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হতে পারে।  

যদিও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেহেতু সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরকারের কথা বলা হয়েছে, সেহেতু বর্তমান সরকারই আসন্ন নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিএনপিসহ কিছু দল আপত্তি তুলেছে এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জানিয়ে আসছে।  

এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সকরারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনও শুরু করেছে তারা। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে অন্যান্য দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিকেও নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।  

সম্প্রতি (১৫ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে তেমন সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছেন।

ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে যারা সদস্য আছেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে, নির্বাচনকালীন তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা তাদের নিতে রাজি আছি। এই উদারতা আমাদের আছে। এর আগেও আমরা নিয়েছি। ’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারে এর আগে যে দলগুলো ছিল, সেগুলোসহ সংসদে থাকা আরও দুই-একটি দল থেকে এবারের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হতে পারে।  

এক্ষেত্রে আরও যে দলগুলোর সংসদ সদস্য রয়েছেন সেগুলো হলো- গণফোরাম, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পাটি (জেপি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ।  

এর আগে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচনকালীন সরকারে নেওয়া হয়। বর্তমানেও এই দলগুলো সংসদে আছে। আবার অতীতে যে দলগুলো নির্বাচনকালীন সরকারে ছিল, এবার তাদের নাও রাখা হতে পারে। তবে কৌশলগত কারণে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিকে এই সরকারে রাখা হবে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্রগুলো।  

যদিও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান দলের নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, সংসদে যাদের এমপি আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে অনেকেরই আগ্রহ আছে বলে দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে দলের কোনো ফোরামে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সংসদে যে দলগুলো আছে, তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তেমনটাই বলেছেন। সংসদে যারা আছেন, তাদের নিয়েই হতে পারে। কিন্তু এর জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, অন্য দলগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে করতে পারেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ও এ ধরনের নির্বাচনকালীন সরকার করা হয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো কিছু জানি না। এটি নিয়ে ১৪ দলে কোনো আলোচনা হয়নি। আগে বিষয়টি বুঝি, তারপর বলা যাবে।  

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারে ছিলেন। এবার আহ্বান জানানো হলে যাবেন কি-না, জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন জোটের এই নেতা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সরকারে ছিলাম, তখন প্রেক্ষাপট একরকম ছিল। এখন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
এসকে/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।