ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৬১ বছর পর স্কুলের বেতন পরিশোধ করলেন ঝিনাইদহের সোহরাব আলী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
৬১ বছর পর স্কুলের বেতন পরিশোধ করলেন ঝিনাইদহের সোহরাব আলী

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের সোহরাব আলীর হঠাৎ মনে হলো স্কুলে তার বেতন বাকি আছে। তাই ৬১ বছর পর এসে তিনি বর্তমান বাজার মূল্যে ৩০০ টাকা জমা দিয়ে তার বেতন পরিশোধ করেছেন।

কোনো ঋণ রাখতে চান না সোহরাব আলী। তাই হঠাৎ বিষয়টি মনে হওয়ায় তিনি এ কাজটি করেছেন।

সোহরাব আলী ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিম বিশ্বাসের ছেলে। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে আছে। বর্তমানে তার বয়স ৭৫ বছর।

মঙ্গলবার (০৭ জুন) উপজেলার ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিজ উদ্যোগে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি তার বেতন পরিশোধ করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বেতন পরিশোধের রশিদও দিয়েছেন। সেটি তিনি যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছেন। সোহরাবের সততায় বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক কর্মচারী মুগ্ধ হয়েছেন।

সোহরাব আলী জানান, আমার বাবাও দরিদ্র ছিলেন। পরের জমিতে কৃষি কাজ করে তাদের সংসার চলতো। ছোটবেলায় তিনি পাশের গ্রাম বড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ১৯৬২ সালে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ফুলহরি বাজারের ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ক্লাস করেন মাত্র ৬ মাস। সেই সময় স্কুলের মাসিক বেতন ছিল ৪ টাকা।

তিনি আরও জানান, আমার বাবা দরিদ্র হওয়ার কারণে পড়ালেখার খরচ দিতে পারতেন না। মাসের পর মাস আমার বেতন বাকি পড়ে যেতো। ফলে আমি স্কুলে গিয়ে লজ্জা পেতাম। অবশেষে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবার সঙ্গে মাঠে কৃষি কাজে নেমে পড়ি। কাজ করার কিছুদিন পর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেই। পুলিশের ট্রেনিং শেষ করে বাড়িতে চলে আসি। পরে আর চাকরিতে না গিয়ে হাটে হাটে খোলা জায়গায় তেল-মসলার দোকান বসিয়ে জীবন কাটিয়েছি।

তিনি জানান, ব্যবসাকালীন অবস্থায় ১৯৭১ সালে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আমরা ভারত চলে যাই। প্রথম দফায় রানাঘাট, পরে করিমপুর। সর্বশেষ বেতাই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেই। বেশ কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি নিজেই প্রশিক্ষক হই। তদারকির অভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামটি আসেনি বলেও জানান সোহরাব আলী। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষণ প্রসাদ সাহা জানান, ১৯২৯ সালে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সোহরাব আলী ভর্তি হন ১৯৬২ সালে। সোহরাব আলী যে দিন বেতন দিতে আসেন, সেদিন আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম। তবে অন্য শিক্ষকরা তার এই ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করার বিষয়টিতে খুশি হয়েছেন। জমা রশিদ দিয়ে তার টাকাটা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।