ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘কারওয়ান বাজারে কোন কাঁচাবাজার থাকবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
‘কারওয়ান বাজারে কোন কাঁচাবাজার থাকবে না’ কথা বলছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা: পৃথিবীর কোন উন্নত দেশের রাজধানীর মাঝখানে এমন পচনশীল পণ্যের পাইকারি কাঁচাবাজার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না।

কারওয়ান বাজারে কোন কাঁচাবাজার থাকবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের লক্ষ্যে কারওয়ান বাজারস্থ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, উন্নত দেশের পাইকারি মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত খালি জায়গাসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করে মার্কেটের ডিজাইন করা হবে।  ঝুঁকিপূর্ণ কারওয়ান বাজারের মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। মার্কেট ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার দায়িত্ব কে নেবে? ক্রেতা-বিক্রেতার জানমালের নিরাপত্তা স্মার্ট বাংলাদেশে নিশ্চিত করতে হবে।

কারওয়ান বাজার মার্কেটটি স্থানান্তর করা হবে উল্লেখ করে আতিকুল বলেন, ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিচ্ছি। স্থানীয় তিনজন কাউন্সিলর, কারওয়ান বাজারের সুপার মার্কেট ও কাঁচাবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা ও ডিএনসিসির কর্মকর্তার সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।

মেয়র বলেন, আমি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরের চিঠি পাওয়ার পরেই ওই এলাকার  কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দিয়েছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে। আমি কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছি গাবতলী কাঁচাবাজারে যাওয়া আসার রাস্তা নির্মাণের জন্য বিএডিসির জায়গা প্রয়োজন। কৃষিমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন রাস্তার জন্য বিএডিসির জায়গা দেবেন। মার্কেট স্থানান্তর হলে নতুন মার্কেটে সমপরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এজন্য নতুন করে কোন টাকা দিতে হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্বান্ত আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কারওয়ান বাজারের চেয়ে বহুগুণ সুবিধা সম্বলিত নিরাপদ আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ডিএনসিসির আটটি মার্কেটকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাই সিদ্বান্ত জানিয়েছে তড়িৎগতিতে ঝুঁকি মার্কেট স্থানান্তর করার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কারওয়ান বাজার সরানোর জন্য যাত্রাবাড়ী, গাবতলী ও মহাখালীতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এটি একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পের আলোকে হয়েছে। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনেই একনেকে পাস হয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। অতএব, এটি কারো মনগড়া কথা নয়।  

মেয়র আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে পার্লামেন্টে বলেছেন পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। তাই দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আসা পণ্য ঢাকা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে থাকবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসা পণ্য ঢাকার উত্তর প্রান্তে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা আমাদের জন্য অনুশাসন। সেই আলোকেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, বাস্তবায়ন করি। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্বান্তেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আমাকে বলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন মার্কেটে ভবন ধসে পড়ছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার পুনরায় চিঠি দিয়েছে আটটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ইমিডিয়েটলি সরিয়ে নিতে হবে। তাই আমরা মার্কেটগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কারওয়ান বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার। প্রকৌশলীরা এই বাজারের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন সময় সিটি কর্পোরেশন বলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাশ দিয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। একসময় হয়তো কারওয়ান বাজারের রাস্তায় ট্রাক চলবে না। ব্যবসায়ীদের এটি আগে থেকেই বিবেচনা করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাউকে জোর করে, ব্যবসা বন্ধ করে, রুটি রোজগার বন্ধ করে আমরা স্থানান্তর করবো না। আপনাদের জন্য বিকল্প ভালো ব্যবস্থা করেই স্থানান্তর করা হবে। আরও আধুনিক সুন্দর মার্কেট নির্মাণ করে স্থানান্তর করা হবে। ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্বান্ত নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিকল্প ব্যবস্থা দ্রুতই করতে হবে। আমরা কেউই চাই না আত্মাহুতি দিতে৷ সবাই মিলেমিশে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি, উইন উইন পজিশন নিশ্চিত করে কারওয়ান বাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মানুষ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবনযাপন করতে পারে, সেলক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কেউই পরিকল্পনার বাইরে নয়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেট স্থানান্তর একটি জটিল সমস্যা। সবার সহযোগিতায় এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লা, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মিতু আক্তার প্রমুখ।

আরও পড়ুন>>

কারওয়ান বাজার ভেঙে পড়লে দায় ব্যবসায়ীদের: মেয়র আতিকুল

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।