নরসিংদী: নিহত শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৫) তার পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন- তিনি যদি কোনো সময় মারা যান তাহলে তার লাশ রেখে যেন অপেক্ষা করা হয়। তিনি তিন থেকে চারদিন পর পুনরায় জীবিত হবেন।
নরসিংদীর মনোহরদী পৌর এলাকায় ঘটে এমন ঘটনা।
মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ শনিবার (১০ জুন) রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫৫), মেয়ে মাহবুবা তালুকদার (৪০) রোকসানা তালুকদার (৩৪), আফরোজা তালুকদার (২৮) ও নিষাদ তালুকদার (২৫)। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে বের হতেন না। নিজেরাই বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন।
নিহত শামীমা সুলতানা নাজমা তার পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন তিনি যদি কোনো সময় মারা যান তাহলে তার লাশ রেখে যেন অপেক্ষা করা হয়। তিনি তিন থেকে চারদিন পর পুনরায় জীবিত হবেন।
গত সোমবার (৫ জুন) শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি কাউকেই জানায়নি। তারা তার জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন।
এদিকে প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেতে থাকেন। তারা ভাবেন ইঁদুর মরে গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে গন্ধ তীব্র হওয়া এবং নাজমার বাড়ির লোকদের রহস্যজনক চলাচলের কারণে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে গেলে দেখা যায় তারা সবাই ঘরেই অবস্থান করছেন। এসময় খাটের নিচ থেকে নাজমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, থানা থেকে তাদের রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমরা প্রেসার বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। শারীরিকভাবে তাদের অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, পরিবারটি এক পীরের মুরীদ ছিলেন। তারা জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন। পুনরায় জীবিত হবেন এই আশায় তারা লাশ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিলেন। আমরা নিহতের স্বামী, চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আর নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু কিনা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর বলা যাবে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
আরএ