ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে নবজাতক বিক্রি, জেলে গেলেন বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
ফরিদপুরে নবজাতক বিক্রি, জেলে গেলেন বাবা আটক রবিউল

ফরিদপুর: নিজের সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলেকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে নবজাতকটি যারা কিনেছেন তাদের একজনকেও আটক করা হয়েছে।

শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে তাদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- নবজাতকের বাবা বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের ইদ্রিস শেখের ছেলে রবিউল শেখ ও শিশুটি ক্রয় করা বাবুল মিয়া। এ মামলায় শিশুটি কেনার সঙ্গে জড়িত আরও দুই আসামি হলেন জেসমিন ও বাবলি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় শিশু চুরির অভিযোগ দায়ের করেন শিশুটির মামা দাউদ খালাসি। শুক্রবার দাউদ খালাসীর অভিযোগটি মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়।

শিশুটির মামা ও মামলার বাদী সালথা উপজেলার নটাখোলা গ্রামের দাউদ খালাসী বলেন, আমার বোনের সঙ্গে রবিউলের সংসারে ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রবিউল ৬ মাস আগে আরেকটি বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার বোন তা মেনে নিয়ে সতিনকে নিয়ে একই বাড়িতে সংসার করে আসছে। তারপরও আমার বোনের ওপর রবিউল ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী, রবিউলের বাবা ইদ্রিস শেখ নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। একটা মানুষ কতটা জানোয়ার হলে নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে পারে।

এ ব্যাপারে শিশুটির মা অসুস্থ সারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী রবিউল ভ্যান চালায়, মাঝে মধ্যে দিনমজুরের কাজ করে যা ইনকাম করে আনে তাতেই আমি খুশি। ৬ মাস আগে নারগিস নামে এক নারীকে আমার অজ্ঞাতসারে বিয়ে করে নিয়ে আসে। আমি তা সহ্য করে একই বাড়িতে সংসার করে আসছি। আমাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন ৮ জুন আমি তখন ৯ মাস ৮ দিনে অন্তঃসত্ত্বা। আমাকে আমার শ্বশুর ইদ্রিস শেখ, আমার স্বামী রবিউল ও আমার সতিন নারগিস জোর করে অটোতে উঠায়। আমি অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি তারা আমাকে মারধর করতে থাকে। আমি মার খেয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লে শ্বশুর আর স্বামী মিলে আমাকে অটোতে উঠিয়ে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে জোর করে সিজার করায়। সিজার করার আগে আমাকে ইনজেকশন দিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয়। অপারেশনের আগে এক নার্স আমাকে বলে যে আপনি বাচ্চা বিক্রি করবেন কেন। কিন্তু তখন আমি আর নড়াচড়া করতে পারি না। সিজার হওয়ার পর নার্সরা আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসে কপালে চুমু খাওয়ার। এরপর আর আমি আমার সন্তানকে চোখে দেখিনি। আমার স্বামী আগে থেকেই বাচ্চা বিক্রির করার জন্য ক্রেতা খুঁজে রেখেছিল। এজন্য তারা আমাকে জোর করে সিজার করিয়েছে। আমি সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামীর বিচার চাই।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, গত ৮ জুন মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর শিশুটির অবস্থা একটু আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ফরিদপুর জায়েদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে আনা হয়। পরে শিশুটির বাবা রবিউল নিঃসন্তান বাবুল মিয়ার কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই রাতেই শিশুটিকে বিক্রি করে দেন। শিশুটির মামা দাউদ আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে শিশুটির বাবা রবিউল ও শিশুটি ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত বাবুল মিয়াকে আটক করি। এর সঙ্গে জেসমিন ও বাবলি নামে দুজন নারী জড়িত আছে তাদেরও আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আটক আসামিদের শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শিশুটি এখন ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটির উদ্ধারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে রওনা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।