রাজবাড়ী: রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে দুদিন ধরে চলছে বাস ধর্মঘট। রাজবাড়ী থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রোববার (১৮ জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজবাড়ীর বড়পুল,মালিক সমিতি ও মুরগির ফার্ম বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকাগামী দূরপাল্লার সব বাসের কাউন্টার বন্ধ। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
এছাড়াও রাজবাড়ী থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে খুলনা, রাজশাহী, দৌলতদিয়া, কুষ্টিয়া, বালিয়াকান্দি যাওয়ার সব লোকাল বাস বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে মাহেন্দ্র, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে। এতে তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ফরিদপুরের করিম গ্রুপের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রাজবাড়ীর রাবেয়া পরিবহন, সুবর্ণ পরিবহন, সৌহার্দ্য পরিবহনসহ রাজধানীগামী সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় রাজবাড়ী জেলা বাসমালিক সমিতি।
গোল্ডেন লাইন বৃহস্পতিবার থেকে রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে বাস চালানো শুরু করে। শুক্রবার সকালে রাজবাড়ীতে গোল্ডেন লাইনের একটি বাস আটকে দেওয়া হয়। গোল্ডেন লাইন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে রাজবাড়ীর সব বাসের কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। এবং তারা কাউন্টার ভাঙচুর করে। রাজবাড়ী বাসমালিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে রাজবাড়ী থেকে ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ কারণে শুক্রবার রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। ওই রাতেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন বাস মালিক গ্রুপ।
জেলা প্রশাসক আশ্বাস দেন যে, গোল্ডেন লাইন রাজবাড়ী দিয়ে চলবে না। কিন্তু শনিবার সকালে ঢাকা থেকে গোল্ডেন লাইনের বাস রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। তাই আবারও শনিবার থেকে বাস বন্ধ করে ধর্মঘট পালন শুরু করের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
মুরগির ফার্ম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সজিব হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি সব বাস বন্ধ। এখন বাধ্য হয়ে মাহেন্দ্রতে ঘাট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। মাহেন্দ্র চালকরাও সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।
আরেক যাত্রী সুরভী ইসলাম বলেন, অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় যাব। বড়পুল মালিক সমিতির কাউন্টারে এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন বাবাকে নিয়ে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় যাওয়া তো অসম্ভব। আমি একা হলে পারতাম, কিন্তু সঙ্গে বাবা রয়েছেন। তিনি ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না।
সুজন ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাস রাজবাড়ীতে চলা নিয়েই এখানকার বাস মালিকদের সঙ্গে ঝামেলা। গোল্ডেন লাইন চললে আমাদের ব্যবসা কমে যাবে। এই ভয়ে তারা গোল্ডেন লাইন চলতে দিচ্ছেন না। এছাড়াও গোল্ডেন লাইনের সার্ভিস ভালো, ভাড়াও রাজবাড়ীর বাসের তুলনায় কম। আর রাজবাড়ীর বাসগুলোর সার্ভিস ভালো না। লক্কঝক্কর বাস দিয়ে তারা সার্ভিস দেয়। এসব কারণে রাজবাড়ীর বাস মালিকরা গোল্ডেন লাইন চলতে দেবে না। তাই তারা ধর্মঘট করছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
রাজবাড়ী বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লিটন বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো আমাদের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আমরা গতকাল ঢাকায় বাস-ট্রাক ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মিটিং করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনো আশ্বাস দেননি। তাই আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। আমরা রাজবাড়ীর পরিবহন মালিকরা মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্তগ্রহণ করব।
রাজবাড়ী জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রাবেয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহিম লিটন বলেন, রাজবাড়ীর কোনো পরিবহন পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু গোল্ডেন লাইন কেন পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে। এ কারণে আমরা পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসএএইচ