বরিশাল: বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামীম বলেছেন, বরিশালকে এক সময় বলা হতো প্রাচ্যের ভেনিস, ভেনিস কিন্তু এখন ভ্যানিশ হয়ে গেছে। আমরা পূর্বে যে বরিশালকে নিয়ে গর্ব করতে পারতাম, সেটা আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডস্থ একটি কনভেনশন হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিমিয় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের বরিশালবাসীর একটি দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবেন। অনেক সময় আমরা দেখি সংবাদপত্র বেশি চলার জন্য আমরা এমন একটা রিপোর্ট দিয়ে দেই, যেটি সঠিক রিপোর্ট নয়। আবার রিপোর্টটিকে অনেকভাবে ম্যাগনিফাই করে আমরা দিয়ে দেই, যেটা সাধারণ মানুষের কাছে মুখরোচক হলেও আসলে সেটার ভেতরে সেইভাবে কোনো সাবজেক্ট থাকে না। আবার আমরা দেখি হেডিংয়ে শেষ করে দেন কিন্তু ভেতরে পড়লে দেখা যায় ব্যক্তির কোনো দোষ নেই। অনেক লোকই কিন্তু পুরো সংবাদ পড়ার সময় পায় না, হেডিংটা পড়ে। বেশির ভাগ লোকই হেডিং দেখে ধরে নেয়, ওই লোকটা খারাপ বা কোনো একটা ঘটনা ঘটেছে।
নতুন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে যদি বিচক্ষণতার সাথে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেন তাহলে ট্রানজিট পিরিয়ডটা সঠিকভাবে অতিবাহিত করতে পারবেন বলে মত ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, বরিশালের উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, আবার মানুষ মাত্রই ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। সিটি নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষ ক্ষোভে রাস্তাঘাট, ট্যাক্সের বিষয়ে বলেছেন। নতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে রাস্তাঘাটের কাজের কথা আমি বলেছিলাম। বরিশালের রাস্তাঘাট সংস্কার করার জন্য এলজিইডির একটি প্রকল্প পরিচালকের সাথে আমি নিজে কথা বলেছি। সেখানে তারা ৪১ কোটি টাকার মতো ব্লক করে রেখেছে কাজ করার জন্য। সমস্যাটা হলো নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করবেন হয়তো ২৪ অক্টোবর, তার আগে এই ফান্ড প্লেস করলে কাজ হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না। আমরা চাচ্ছি এই ফান্ড রাস্তা মেরামতের জন্যই ব্যবহৃত হোক, সিটি করপোরেশনে প্লেস করার পর ফান্ড যদি এদিক-সেদিক চলে যায়, তাহলে সমস্যা হবে। আর এই ফান্ডের নিশ্চয়তা তখনই দিতে পারব যখন নতুন মেয়র দায়িত্ব নেবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বরিশাল সিটির বাসিন্দারাও আমার ভোটার, রাস্তাঘাট ঠিক না থাকলে তারা আমাকে ভোট দেবে কেন? কিন্তু কী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কাজ করতে পারিনি তা আপনারা জানেন। সদর উপজেলার জন্য অনেক কাজ করেছি এবং বিশাল একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এছাড়া বরিশাল শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের জন্য আগামী মাসে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। যেখানে ৭টি খাল খনন করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৪০০টি জায়গায় ভ্রমণ করেছি। কোনো কোনো জায়গায় ৪-৫ বার গিয়েছি। আপনারা দেশের যেকোনো প্রান্তে যাবেন আমার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলবে না, সবাই বলবে উনি তো দেবতার মতো, উনি আমার এলাকায় ৪-৫ বার এসেছেন, মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। তারা এরকম ধারণাই আমার সম্পর্কে দেবে।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল একটি বিভাগীয় শহর, সুন্দর শহর। বরিশালের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আমরা বরিশালের পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না, এটাই হোক সবার প্রতিজ্ঞা। আমরা নতুন আঙিকে বরিশালকে সাজাতে চাই, পরিবেশ ও মানুষকে সুন্দর রাখতে চাই, যুবসমাজ মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচুক সেটি আমরা চাই।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জাহিদ ফারুখ শামীম। তিনি বলেন, আমার ব্যর্থতার কথাও আমি তুলে ধরি, কারণ কাজ করতে গিয়ে আমার আন্তরিকার কোনো কমতি নেই। আমি কিন্তু ৫ বারের এমপি না। প্রথমবার হওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছেন। আমি যদি মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিকভাবে করতে না পারতাম তাহলে যেকোন সময় সুযোগ ছিল আরেকজন সিনিয়র কাউকে আমার ওপর বসিয়ে দেওয়ার। এজন্য আমি ওখানে মনযোগ বেশি দিয়েছি, তারপরও প্রতি সপ্তাহে আমি বরিশাল এসেছি। মাঝেমধ্যে দুই-একটা সপ্তাহ বাদ গেছে।
সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ না করার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যাদের নম্বর সেভ আছে তাদেরগুলো পরবর্তীতে হলেও ব্যাক করি। আর যাদের নেই, তারা মেসেজ দিয়ে রাখবেন, অবশ্যই কলব্যাক করব।
মতবিনিময় সভায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান মধু, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ