ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুন্সিগঞ্জের আতঙ্ক শাহাদাত বাহিনী

মামলা করায় বাদীকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
মামলা করায় বাদীকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা

ঢাকা: মুন্সিগঞ্জের মূতিমান এক আতঙ্কের নাম শাহাদাত বাহিনী। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেই তাকে ছাড়তে হয় এ দুনিয়া।

সম্প্রতি এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদীকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে মুন্সিগঞ্জের সদর এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন শাহাদাত বেপারী। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে শাহাদাতের সন্ত্রাসী বাহিনী।

এ ঘটনায় আহতের ভাই প্রবাসী শ্যামল ব্যাপারী একটি মামলা করেন। শাহাদাত আত্মগোপনে থাকলেও ওই মামলায় তার ছেলে মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হয়। মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই শ্যামলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত।

গত ১৪ জুন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পূর্বরাখি এলাকায় গভীর রাতে প্রবাস ফেরত শ্যামল ব্যাপারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে শাহাদাত বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পকারী শাহাদাত বেপারীসহ (৪৫) তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মহিউদ্দিন বেপারী (২০) ও হায়াতুন ইসলাম (৪২)।

বুধবার (২১ জুন) রাতে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১৪ এর আভিযানে মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, গ্রেপ্তার শাহাদাত বেপারীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে গত ১৪ জুন রাতে শ্যামলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শ্যামলের আত্মীয়ের সঙ্গে শাহাদাতের বিরোধ চলছিল।

এরই জেরে ৫-৬ মাস আগে শ্যামলের আত্মীয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহাদাতের বাগবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। পরে এ নিয়ে শ্যামলের সঙ্গেও শাহাদাতের বাগবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে শাহাদাতের পরিকল্পনায় ও উপস্থিতিতে শ্যামলের ভাইদের স্থানীয় বাজারে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় শ্যামল বাদী হয়ে শাহাদাত ও তার ছেলে মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে শাহাদাত আত্মগোপনে যান। কিন্তু তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী ও তার এক সহযোগী গ্রেপ্তার হয়। পরে শাহাদাত ও তার ছেলে আদালত থেকে ওই মামলায় জামিন পায়।

এ মামলার কারণে আত্মগোপনে থাকার সময়ে শ্যামলকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহাদাত বেপারী। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহাদাত আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল ও ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখে। শাহাদাত ১৫-২০ জনসহ গত ১৪ জুন রাত দেড়টার দিকে শ্যামলের বাড়ির চার দিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালায়। তারা শ্যামলের ঘরে ঢুকে শ্যামলকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, শ্যামল বেপারী ২০০৪ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে চাকরি করেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসেন।

শাহাদাত বেপারী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারীসহ ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছিল। হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। আত্মগোপনে থেকেই শ্যামলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালায়।

তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। এর আগেও সে বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন বেপারী শ্যামল হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারীর ছেলে। এলাকায় তার নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলে। এ গ্রুপটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল।

সম্প্রতি মহিউদ্দিন আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় কয়েকজনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ৫টি মামলা রয়েছে। সেও বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

গ্রেপ্তার হায়াতুন শাহাদাতের সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন সদস্য। সে শ্যামল হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতের সহযোগী ছিল। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।