রাজশাহী: অগ্নিদগ্ধ হয়ে মা ফরিদা ইয়াসমিনের (৪২) মৃত্যু হয় ঘটনার দিনই। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তার দুই ছেলেকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
শুক্রবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বড় ছেলে রাশিদুল বাসারের (২৬) অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এর আগে আগুনে পুড়ে স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের মৃত্যুর হয়। পরে তার দুই ছেলেকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছোট ছেলে রাফিউল মারা যান। তার বড় ছেলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এর আগে শুক্রবার ভোরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামের মাদারীগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বাগমারা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সেই আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
ওসি আরও জানান, নিহত নারীর নাম ফরিদা ইয়াসমিন (৪২)। তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। আহত দুই ছেলে হলেন রাশিদুল বাসার (২৬) ও রাফিউল বাসার (১৯)। তাদের বাবার নাম এজাজুল বাসার স্বপন। তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে ইউনিটের টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত। স্কুলশিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই ছেলের মধ্যে রাশিদুল রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। আর রাফিউল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় এজাজুল বাসার স্বপন বাড়িতে ছিলেন না। ঈদ করতে তিনি শহরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এই পরিবার যে বাড়িতে থাকে সেটি ‘আশা’ নামের একটি সিনেমা হল ছিল। হল বন্ধ হওয়ার পর এজাজুল সেটি কিনে নেন। এর তৃতীয় তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। এ ভবনে কয়েক জন ভাড়াটেও ছিলেন। তবে ঈদের কারণে তারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার ভোরে রান্নাঘরের খড়ির চুলা থেকে আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ফরিদা ইয়াসমিন তার ঘরেই ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা যান। পাশের ঘরে থাকা দুই ভাইয়ের শরীরে আগুন লাগলে তারা বাসার ছাদে ওঠে নিচে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। এতে তারা অগ্নিদগ্ধের পাশাপাশি আরও বেশি আহত হন। পরে গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বাগমারা স্টেশনের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ভবনের দোতলায় রান্নাঘর ছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনে আগুন লাগার পর স্থানীয়রা তা নেভানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। পরে তৃতীয় তলার একটি কক্ষে স্কুলশিক্ষিকার মরদেহ পাওয়া যায়। নিচে আহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন দুই ছেলে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইউসুফ আলী জানান, আগুনে রাফিউল বাসারের শরীরের ৫০ শতাংশ ও রাশিদুল বাসারের শরীরের ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ জন্য তারা শিক্ষিকার দুই ছেলেকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
এসএস/এসএম