ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২১ বছর পর ভারত থেকে মা-বাবার বুকে ফিরলেন মতিউর!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
২১ বছর পর ভারত থেকে মা-বাবার বুকে ফিরলেন মতিউর!

পঞ্চগড়: হারিয়ে যাওয়ার একুশ বছর পর ভারত থেকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরলেন মতিউর রহমান (৩৬) নামে এক যুবক।  

শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে উভয় দেশের আইনি ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে মতিউরকে দিতে আসে ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী।

তাকে ফিরে পেয়ে বাঁধভাঙার আনন্দে কাঁদতে থাকেন স্বজনরা।

মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁওয়ের আখানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে।

জানা যায়, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত ২১ বছর আগে নিখোঁজ হন মতিউর রহমান। নিজের অজান্তেই কোনো এক সময় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন সে। ভবঘুরে থাকা অবস্থায় গত তিন বছরে আগে শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন নামে একটি ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মতিউরকে রাস্তা থেকে তুলে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এদিকে কিছুটা সুস্থ হয়ে নিজ পরিচয় জানালে অবশেষে উভয় দেশের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরেছেন মতিউর। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।  
এর আগে ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার বুক শূন্য করে হারিয়ে গিয়েছিলেন মতিউর। তবে মতিউর কবে, কীভাবে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সেটা কেউ বলতে পারেনি।

কাঁদতে কাঁদতে মা মর্জিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের জন্য আল্লাহর দুয়ারে অনেক কেঁদেছি। ছেলে যেখানেই থাকুক না কেন, যেন সুস্থ থাকে দোয়া করেছি। আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন। সুস্থ্যভাবে তাকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন।  

বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, আমার মানিকটাকে যারা ফেরত দিল, তাদের জন্য সারা জীবন দোয়া করব। তাদের কারণে আমার ছেলে দেশে ফিরতে পেরেছে।

তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, একসময় আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মতিউর বেঁচে নেই।

শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা বলেন, ভারতের মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার রাস্তা থেকে মতিউর রহমানকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার পর জানতে পারি, তার বাড়ি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ে। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে আজকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। প্রথমবারের মতো আমরা ভিনদেশের কাউকে ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের আখানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমান বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, মানবাধিকার কর্মীরা এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তারা রাস্তা থেকে মতিউরকে উদ্ধার করে সুস্থ করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা গত ৮ মাসে আগে তার খবর পেয়েছিলাম। তখন থেকে তার পরিবারসহ পুরো এলাকা তাকে দেখতে অপেক্ষায় রয়েছিল। আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশের সকল প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করেছি।

উল্লেখ্য, গত ২০০২ সালে হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে মতিউরের পরিবার। এরপর করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার পর আহমেদাবাদের বেসরকারি সংস্থা ‘স্নেহালয়’ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গত ৮ মাসে আগে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে যোগাযোগ করে শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন। অবশেষে দীর্ঘ ২১ বছর পর কিছুটা সুস্থ হয়ে পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা ও ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেন মতিউর।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।