ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সজীব হত্যা: পুলিশের বক্তব্যে নাখোশ পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
সজীব হত্যা: পুলিশের বক্তব্যে নাখোশ পরিবার সজীব

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের বিএনপি পদযাত্রায় দিন ছুরিকাঘাতে সজীব খুন হওয়ার ঘটনা নিয়ে নানামুখী বক্তব্য আসছে পুলিশ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। তবে নিহত সজীবের পরিবার নাখোশ রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফের দেওয়া বক্তব্যে।

 

আর ঘটনার চারদিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় পুলিশ কোনো আসামিকে শনাক্ত না করায় ক্ষোভ তাদের।  

সজীবের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ খুনিদের চিহ্নিত না করে উল্টো ‘মিথ্যা’ তথ্য চড়াচ্ছে। তাদের দাবি- সজীব যে কারণেই খুন হোক না কেন, পুলিশের উচিত খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা।  

গত ১৮ জুলাই বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের সামাদ মোড় সংলগ্ন কলেজ রোড এলাকায় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় সজীব।  

এদিন, বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন ঘটনাস্থলে দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এর মধ্যেই সজীবকে ছুরিকাঘাত করা হয়। প্রাণে বাঁচতে ঘটনাস্থলের পাশেই মদিন উল্যা হাউজিংয়ের ফিরোজা টাওয়ারে দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়ে রক্তাক্ত সজীব। সেখানে প্রাণ হারায় সে। দীর্ঘসময় পর পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তার পরনে থাকা প্যান্টের পকেট থেকে কৃষকদল লেখা ব্যাচ এবং ক্যাপ বের করা হয়।  

জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে কৃষকদলের সক্রিয় কর্মী এবং ছাত্রলীগ নেতাদের ছুরিকাঘাতে হত্যার কথা বলা হয়। কিন্তু ঘটনাকে রাজনৈতিক হত্যা হিসেবে বলছে না পুলিশ।  

লক্ষ্মীপুরের এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফের দাবি, পাওনা টাকা ও বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সজীবকে খুন হতে হয়েছে। তিনি বিএনপির পদযাত্রায় যোগ দিতে লক্ষ্মীপুর শহরে আসেনি। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের যে স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, ওই স্থান থেকে সজীব হত্যাকাণ্ডের স্থান দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে।  

কিন্তু পুলিশের এ দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ বলছে বিএনপি এবং নিহতের পরিবার।

সজীবের বোন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ বলছে, আমার ভাইকে নাকি টাকার জন্য মেরে ফেলছে, বিয়ের জন্য মেরে ফেলছে। এগুলো মিথ্যা। আমার ভাই (সজীব) এখনও ছোট। আমাদের আর বড় দুই ভাই আছে। তারাও বিয়ে করেনি। তাহলে সজীব কীভাবে বিয়ে করল, তার বউ কই, কোথায় তার বাচ্চা? পুলিশ কীভাবে এসব ‘মিথ্যা’ তথ্য দিচ্ছে?’

তিনি আরও বলেন, সজীব যদি টাকার জন্য মরতো, তাহলে চন্দ্রগঞ্জ থেকে বিএনপির পোগ্রামে লক্ষ্মীপুরে গেল কেন? পুলিশ কেন সত্যিটা বলছে না? কে আমার ভাইকে মারল? আমার দাবি- আমার ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার। যারা আমাদের বুক খালি করছে, তাদের বিচার চাই।

সজীবের মেঝ ভাই সুজন বলেন, আমার ভাই মরার পর অনেকে কথা আসছে, সে নাকি বিয়ে করছিল। সে তো আমাদের ছোট। সে বিয়ে করে নাই। আমরা বড় দুই ভাই-ই তো বিয়ে করিনি। অনেকে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে, যা সহ্যও হচ্ছে করতে পারছি না। এমনও শোনা যাচ্ছে- ‘যৌতুকের মামলায় টাকা-পয়সা পাবে, সেজন্য তাকে মারা হয়েছে’, -এসব ধরনের কথা সত্য নয়। আমার ভাইয়ের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার চাই, যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। সে বিএনপি পদযাত্রায় গিয়েই নিহত হয়েছে।  

সজীবের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলে সজীব ট্রাকে করে বিএনপির মিছিলে গেছিল। মিছিলে কিছু লোকজন তারে দৌড়ানি দিছে। তখন আমার ছেলেরে কয়েক দফা মারধরসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করছে তারা। বাঁচার জন্য সজীব একটা বাড়িতে যাইয়া আশ্রয় নিছিল, কিন্তু তারা তাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।  

তিনি জানান, সজীব ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এখন কর্ম করত। পাশাপাশি ড্রাইভিং শিখছিল বিদেশ যাবার জন্য। অর্ধেক শেখাও হয়ছিল।  

বাবা আবু তাহের বলেন, দল করা কি অপরাধ? সজীব যে কোনো দল সাপোর্ট করতেই পারে। সেজন্য কি তাকে মেরে ফেলতে হবে? আমরা দিন মজুর, কৃষক। সেও দিনমজুর, কৃষক। আমার ছেলে দলের জন্য মারামারি করবে, নিজের জীবন দেবে- সে এ ধরনের ছেলে ছিল না।  

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, সজীব জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সক্রিয় কর্মী। তাদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বাড়ি বিএনপি অধ্যুষিত বাড়ি। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, পুলিশ এখানে অতি উৎসাহী হয়ে যে ভূমিকা রাখছে, প্রকারন্তে খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। সজীবের পরিবার খোঁজ-খবর নিয়ে এজাহার করতে চেয়েছে, কিন্তু তড়িঘড়ি করে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি এজাহার নিয়েছে, যাতে খুনিরা আড়াল হতে পারে।  

তার দাবি- খুনিদের আড়াল করতেই পুলিশের এ ভূমিকা। এর নিন্দা জানাই। সজীবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে, প্রকৃত খুনি যারা, তাদের আসামি করে আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের হবে।  

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন সময় কৃষকদল কর্মী সজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সুপারসহ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সরাসরি মদদেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সবার বিচার হবে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ সুপারসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।