ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে ৪০ মামলায় গ্রামছাড়া ৬০ পরিবারের সম্প্রীতির শপথ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
ফরিদপুরে ৪০ মামলায় গ্রামছাড়া ৬০ পরিবারের সম্প্রীতির শপথ

ফরিদপুর: দীর্ঘ আট বছর ধরে গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একটি হত্যা মামলাসহ সবমিলিয়ে মামলা হয়েছে ৪০টি। যার আসামি গ্রামের কয়েকশ বাসিন্দা।

৬০টি পরিবার এখন গ্রামছাড়া। তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষ শুরু হলে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, ফসল লুণ্ঠন ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।

এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি নিরসনে অবশেষে 'আর সংঘাত নয়, শান্তি চাই' এই বলে মিলেমিশে বসবাস করার প্রতিশ্রুতি ও শপথ নিয়েছেন বিবদমান দুই পক্ষের কয়েকশ মানুষ।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগিবরাট গ্রামে এর মাধ্যমে প্রায় আট বছর ধরে দুই পক্ষের চলমান দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে শান্তি ফিরে আসবে বলে আশা সবার।  

শনিবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার ভ্যান্নাতলা বাজারে দুই পক্ষের সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

এসময় বক্তব্য দেন- আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ, আলফাডাঙ্গা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবু তাহের, পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সরদার, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, বুরাইচ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু মিয়া, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান, আলফাডাঙ্গা উপজেলার যুব লীগের সাবেক সভাপতি আহসানুদ্দৌলা রানা, গোলাম রসুল, মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

জানা গেছে, যোগিবরাট গ্রামে মাঝেমধ্যেই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতো। বর্তমানে এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আমিনুর রহমান। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য এস এম হাবিবুর রহমান হবি মেম্বার, হেমায়েত শেখ, শাহীন মোল্যা প্রমুখ। নতুন করে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াই গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় এলাকায় ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।

একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দানকারী ইউপি সদস্য মো. আমিনুর রহমান বলেন, গ্রামটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত অবসান হওয়ায় আমরা আনন্দিত। আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়েছি। আশা করি এই সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে।  

শাহীন মোল্যা বলেন, আমরা আর বিরোধ চাই না, শান্তিতে সবাই মিলে বসবাস করতে চাই। আজকের পর থেকে যোগিবরাট গ্রাম হবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উপজেলার মধ্যে রোল মডেল।  

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সরদার বলেন, সাত/আট বছর ধরে চলা বিরোধ মিটাতে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি সাহেবসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে আজ একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি ভবিষ্যতে তারা আর দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়াবে না।

আলফাডাঙ্গা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে যুগিবরাট গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে একটি সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করেছি। তারা শপথ করেছে দ্বন্দ্ব সংঘাত অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে। ফের যদি কোনো পক্ষ দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়ায় তাহলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, আমরা সবাই শান্তি চাই। বিবদমান দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আশাবাদী তারা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।