ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৩ কারণে বাস দুর্ঘটনায় ঝালকাঠিতে ১৭ জনের প্রাণহানি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
৩ কারণে বাস দুর্ঘটনায় ঝালকাঠিতে ১৭ জনের প্রাণহানি

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় বাস পুকুরে পড়ে ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় তিনটি কারণ শনাক্ত করেছে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুন শিবলী।

তিনি জানান, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য তিনটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত বাসটির চালকের খামখেয়ালিপনা, দ্বিতীয়ত চালকের অপেশাদার আচরণ এবং তৃতীয়ত বিধি ভেঙে রাস্তার পাশে বড় পুকুর খনন।

দুর্ঘটনা কবলতি বাস ‘বাশার স্মৃতি পরিবহনে’র ফিটনেস থাকলেও চালক মোহন খানের ড্রাইভিং লাইসেন্সে ছিল হালকা গাড়ি চালানোর। কিন্তু তিনি বাসের মতো একটি ভারি যানবাহন চালাচ্ছিলেন দীর্ঘদিন ধরইে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, তদন্তে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, রাস্তার পাশের বড় ও গভীর পুকুরটি মৃত্যুকূপে রূপ নিয়েছে। ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর বা মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা সড়কটি অত্যন্ত পুরোনো। এ সড়ক প্রশস্ত নয়। এদিকে রাস্তার পাশের জমির মালিকরা পুকুর কেটে মাছ চাষ করেছেন। সড়কটির দুই পাশে যদি মহাসড়কের মতোই ১০/১২ ফুট জমি অধিগ্রহণ করা থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটলেও এতো প্রাণহানি হয়তো হতো না।

মোহাম্মদ শিবলী মামুন বলনে, বাসমালিক পক্ষের উচিত কার হাতে গাড়ি দিচ্ছে, তার ব্যাপারে যথাযথ মনিটর করা। তদন্তকারী আরও দুটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে চালক মোহন খানের খামখেয়ালিতে দুর্ঘটনা ও ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে বাসের চালক তার সিটে বসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা নিয়ে তর্ক করছিলেন আর মোবাইল ফোন চালাচ্ছিলেন বলেও তদন্তে উঠে আসে। এছাড়া বাসমালিক সমিতি ও মালিকপক্ষ আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, পরবিহন চলাচলে নির্দেশনা মেনে চলতে গড়িমসির কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। সম্প্রতি সড়কে গাড়ির চাপ বাড়লেও সে অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত নয়।  

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ঝালকাঠির উপ-পরিচালক ফিরোজ কুতুবী জানান, আমাদের তদন্ত কাজ প্রায় শেষ। এখন প্রতিবেদন সম্পূর্ণ করে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ আর প্রতিবন্ধকতা সব বিষয় উঠে এসেছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, প্রতিবেদন পেয়েছি। সুপারিশ অনুযায়ী পরর্বতী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।  

তিনি জানান, নিহতদের দাফনের জন্য আইজিপি স্যারের বরাদ্দ থেকে এক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

গত ২২ জুলাই সকাল ১০টার দিকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি যাচ্ছিল বাসটি। পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংলগ্ন ছত্রকান্দায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এতে ১৭ জন নিহত হন। আহত হন ৩০-৩৫ জন। বাসটিতে ৫০-৬০ এর মতো যাত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।