ঢাকা: ‘ভাই, আমি আওয়ামী লীগ করি। আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ করে।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী পরিবারের সন্তান লাল মিয়া। বাবা আবদুল খালেক ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ মুজিব সেনা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। যতদিন বেঁচে ছিলেন, সারা শরীরে বোমার স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেরিয়েছেন তিনি। লাল মিয়া নিজেও আছেন ঢাকা উত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য পদে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে ফেসবুকে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেন জুলাই মাসে। এ ছবি প্রকাশই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। লাল মিয়ার ওপর হামলা করে ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা।
গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণ মানিকদি বেলাল হোসেন রোডে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করছিল। ওসি বলে দেওয়ার পরে মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে থানায় আব্বাস উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই তানজির প্রভাব খাটিয়ে মামলায় আসামির নাম পরিবর্তন করেন।
শনিবার (৫ আগস্ট) ভুক্তভোগীর স্ত্রী মাকসুদা ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচজনের নামে ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- মো. শাহরিয়ার রাসেল (৩২), মাসুদ (৩০), মো. শাহাদাত হোসেন (৩৭), মানিক (৩৬), সজীব (২০) ও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জন।
ভুক্তভোগী লালমিয়া বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে নির্বাচিত কমিশনার জহির আহমেদের সঙ্গে একটি ছবি আমার ফেসবুকে পোস্ট করি। এ ছবি পোস্ট করায় গত ৩ আগস্ট বিকেলে মানিকদি এলাকার ত্রাস আব্বাসের একলোক ফোন করে বাসার বাইরে আমাকে ডাকেন।
বামে ফেসবুকে লাল মিয়ার আপলোড করা ছবি, ডানে অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দিন
তিনি বলেন, আমি বাইরে গিয়ে দেখি আব্বাস ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আব্বাসকে সালাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আব্বাস বলে তুই তো আমার নির্বাচন করিসনি। এখন আবার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলিস বলেই আমাকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে আব্বাস। আব্বাসের হাত থেকে নিয়ে তার সাঙ্গোপাঙ্গরা আমাকে মারতে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী এগিয়ে আসলে তাকেও রেহাই দেয়নি সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে আমার হাত ভেঙে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন আমাকে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাঙা হাতের চিকিৎসা করানো হয়।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আমি ক্যান্টনমেন্ট থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ আমার মামলা নিতে গড়িমসি করে। এসআই তানজির আব্বাসের পক্ষে আমাকে ভয়ভীতি দেখান। পরে ওসির সঙ্গে কথা বললে তিনি মামলা নিতে বলেন।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, আমরা মামলার এজাহারে যা বর্ণনা করেছি তার ৯০ ভাগই ফেলে দিয়েছেন এসআই তানজির। তানজিরের জন্যই আজ আমি বিচার পাওয়া থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আব্বাসই আমার স্বামীকে প্রথম আঘাত করেছে।
আসামিদের ভয়ে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের ভয়ে পুরো মাটিকাটা, মানিকদি এলাকার সাধারণ মানুষ সবসময় তটস্থ থাকে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বলে জানান লাল মিয়া।
অভিযুক্ত ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনও সাংগঠনিকভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আব্বাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
মামলার মূল আসামি আব্বাসকে হুকুমের আসামি বানানো ক্যান্টনমেন্ট থানার অভিযুক্ত এসআই তানজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয় ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী সাব্বির আহম্মদের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কারণ আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৩
এমএমআই/জেএইচ