ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তা, ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তা, ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান

ফেনী: পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে মারধর ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজীর এক ছাত্রলীগ নেতাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

শনিবার রাতে ভুক্তভোগী একজন ছাত্রী বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন।

 

মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রবিউল হাসান, তার বাবা হেলাল উদ্দিন, সহযোগী মো. তুষার, মো. মুরাদ, মো. ফারুক।  

গত ১৭ আগস্ট দুপুরে উপজেলার ডাক বাংলা এলাকায় একটি দোকানের ভেতরে ও কাজীরহাট সংলগ্ন কালি বাড়ির সামনে সড়কে ওই ছাত্রীদের মারধর ও যৌন হেনস্তা করা হয়। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম থানায় মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও পরিবার সূত্র জানায়, মারধর ও শ্লীলতাহানীর শিকার তিন ছাত্রী সোনাগাজী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলার বক্তারমুন্সি শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দেন তারা। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তারা তিনজন এক সঙ্গে হেঁটে ডাক বাংলা এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে বসে নাস্তা করেন। এসময় তাদের পিছু নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ওই দোকানে গিয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখান এবং নানান ধরনের কটূক্তিমূলক কথা বলতে থাকেন।  

একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান তাদের কাছে গিয়ে একজন ছাত্রীকে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে বলে, ‘তোকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইছি, দ্রুত এক্সেপ্ট করবি না হয় ভালো হবে না। ’ ছাত্রীটি তার কথায় সাড়া না দিয়ে প্রতিবাদ করলে দোকানের ভেতরে তাকে চড়- থাপ্পড় ও লাথি মেরে বোরকা-হিজাবসহ হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন রবিউল। এরপরও ছাত্রীরা কোনো কথা না বলে সিএনজিতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রবিউলও তার সহযোগীদের নিয়ে আরেকটি গাড়ি নিয়ে ওই সিএনজির পিছু নেন। পরে ছাত্রীরা উপজেলার কাজীরহাট সংলগ্ন কালি বাড়ির সামনে পৌঁছালে পুনরায় রবিউল তাদের গতিরোধ করে ওই ছাত্রীকে টেনে সিএনজি থেকে নামিয়ে আবারও মারধর করতে থাকেন।  

এসময় অপর দুই ছাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদের দুইজনকেও রবিউলসহ তার সহযোগীরা মারধর করে টেনেহিঁচড়ে বোরকা ও হিজাব খুলে শ্লীলতাহানি করেন। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ছাত্রলীগ নেতা রবিউলসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার তিন ছাত্রী বখাটে রবিউলসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে আস-যাওয়ার করতে নিরাপত্তা চান তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম অনীক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ওই তিন পরীক্ষার্থী নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে পরীক্ষায় অংশ নেবে। ছাত্রীদের কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান রাসেল বলেন, রবিউল উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে থানায় তিন ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে জানিয়েছি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসএইচডি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।