ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শিল্পকলায় শুরু হলো ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ আর্ট প্রদর্শনী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
শিল্পকলায় শুরু হলো ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ আর্ট প্রদর্শনী ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও অন্তত ৩০০ জন আহত হন।

ভয়াল সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায় পুরো জাতিকে। সেই দিনটি স্মরণ করেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হলো ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনী।

চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ২১-২৩ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী এ প্রদশর্নী একাডেমির নন্দনমঞ্চ সংলগ্ন উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (২১ আগস্ট) বিকেলে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে গেলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে তার প্রয়োজন।  

দেশের সার্বিক উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধো ভাতা থেকে শুরু করে নানামুখী কর্মকাণ্ডে দেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এ সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক দল দেখে তারা আঘাত করছে।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী সৈয়দা মাহবুবা করিম (মিনি করিম)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এত শোক সভা আর এত রক্ত পৃথিবী দেখেনি। এ আগস্ট মাসেই অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু হারিয়েছি সর্বোচ্চ। একটি পরিবারের হাতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সব সদস্যের মৃত্যু। সেটা হলো জিয়াউর রহমানের পরিবার। আজকের এদিনে কী নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। কিছুক্ষণ আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিলেন যে, গ্রেনেড হামলা না কি আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক ছিল। একটা মানুষ কত বড় নির্মম, নিষ্ঠুর ও মিথ্যাবাদী হলে এ ধরনের কথা বলতে পারে। তারই নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন শেখ হাসিনা তার ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। এ হলো বিএনপি। তাহলে ২৪ জন গ্রেনেড হামলায় মারা গেল তারা কারা। সবকিছুর একটা শেষ আছে। তাদেরও শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, আগামীতে সারা দেশের ৬৪ জেলার শিল্পকলায় যেন এ আয়োজনটি করা হয়।

আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন গ্রহণের পর ২১ আগস্ট ভয়াবহ হামলার স্মরণে শোকাবহ বাঁশির সুর পরিবেশন করেন একাডেমির যন্ত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান মিয়া। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে উপজীব্য করে নির্মিত পাবলিক আর্ট প্রদর্শনীর ওপর বক্তব্য দেন কিউরেটর ও শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সম্মানিত অতিথিরা নন্দনমঞ্চ সংলগ্ন ‘২১ আগস্ট একটি বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।

২০০৪ সালের সেই হামলার ভয়াল দিনে আলোকচিত্রী হিসেবে যারা ছিলেন, সেই ছবির প্রদর্শনী ও ওইদিনের অনুভূতি প্রকাশ করেন আলোকচিত্র সাংবাদিক মীর ফরিদ ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনীর ওপর কিউরেটর শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতার ভেতর জীবন বাজি রেখে সরাসরি ছবি তুলেছেন এবং এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন সেসব আলোকচিত্র সাংবাদিকরা হলেন- মীর ফরিদ, হাবিবুর রহমান, জিয়া ইসলাম, রিয়াজ আহমেদ সুমন ও শেখ হাসান।

বিভিন্ন আলোকচিত্রী ও অন্যরা বলেন, অন্যান্য সমাবেশের মতোই আমরা সেদিন সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ কাভার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কেউ জানতো না যে এ সমাবেশে এত বড় নৃশংস ঘটনা ঘটবে। আমাদের সবার ছবি তোলা প্রায় শেষ। সভানেত্রী চলে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তে লোকজন দৌড়ানো শুরু করলো আর চারদিকে ধোয়ায় ঢেকে গেল। ধোয়ার আর্দ্রতা কমতে শুরু করলে দেখতে পাই পুরো রাস্তাজুড়ে শুধু মানুষের লাশ পড়ে আছে। সে সময় আমি কোনো রকম ট্রাক থেকে নিচে লাফ দিয়ে নামলাম। ট্রাকের উচ্চতা তেমন বড় ছিল না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি আকাশে ভাসছি। এ ঘটনার পর অনেক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। সে ঘটনা ভোলার নয়। এ ধরনের অপরাধ এবং সন্ত্রাস যারা করে তাদের অবশ্য বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। এ ধরনের ঘটনা যেন আমাদের আর দেখতে না হয়। এদেশে যেন এ ধরনের নৃশংস ঘটনা আর না ঘটে।

বিভীষিকাময় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ শিল্পকমের মাধ্যমে তুলে ধরতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর স্থাপনাশিল্প, আলোকচিত্র, পারফরমেন্স আর্ট ও পাবলিক আর্ট প্রদর্শনী আয়োজন করে আসছে। প্রদর্শনী ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন খন্দকার রেজাউল হাশেম, উপ-পরিচালক, চারুকলা বিভাগ, সমন্বয়কারী মো. মাহাবুবুর রহমান (সুজন), সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী), চারুকলা বিভাগ। প্রদর্শনী ২১-২৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।