ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জোড়া থেকে আলাদা, ১৪তে পা রাখল সেই মনি-মুক্তা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
জোড়া থেকে আলাদা, ১৪তে পা রাখল সেই মনি-মুক্তা

দিনাজপুর: দেখতে দেখতে ১৩ পেরিয়ে ১৪ বছরে পা রাখলো জোড়া থেকে আলাদা হওয়া দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার জমজ দুই বোন মনি-মুক্তা। উপজেলার ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে তারা।

স্বপ্ন বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে জনগণের সেবা করার।  

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে প্রতি বছরের মতো এবারও কেক কেটে মনি-মুক্তার জন্মদিন পালনের আয়োজন করা হয়। রাতে ধর্মীয় কীর্তন শেষে পারিবারিকভাবে কেক কাটা হয়।

এসময় মনি-মুক্তার আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।  

কথা হলে মনি-মুক্তা জানায়, আজকে জন্মদিনে অনেক আনন্দ করেছি। আমার বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীরা অনেকেই আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, উপহার দিয়েছে। জন্মদিন উপলক্ষে আজকে নতুন জামা পরেছি। সবাই একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছি, গল্প করেছি। আজকের দিনটা অনেক ভালো লাগে।

মনি-মুক্তা আরও জানায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের দুই বোনকে জোড়া লাগানো থেকে আলাদা করেন ডা. এআর খান। যদি আলাদা না হতাম তাহলে চলাফেরা, খাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটত। এখন যেমন দুজন স্বাধীনভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম, পড়ালেখা করতে পারছি সেটা হত না। আমরা এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ শিখতেছি, ছবি আঁকতে শিখতেছি। আমাদের দুজনের ইচ্ছে আমরা বড় হয়ে ডাক্তার হবো। আমরা যেমন দেশবাসীর দোয়া-আশির্বাদ আর ডাক্তারের কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে আলাদা হতে পেরেছি, আমরাও সেভাবে যেন জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারি। এজন্য আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।  

মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, আজকে মনি-মুক্তার জন্মদিন উপলক্ষে ওর বন্ধু-বান্ধবসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন আসে। সকালে ওর বন্ধু-বান্ধবরা মিলে কেক কাটে। রাতে ধর্মীয় কীর্তনের পর আমরা পারিবারিকভাবে কেক কাটি। জোড়া লাগানো অবস্থায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, ডাক্তারদের অপারেশনের মাধ্যমে দুজন আলাদা হওয়ার পর থেকে সেই দুশ্চিন্তা কমে গেছে। এখন ওদের স্বপ্ন ওরাও বড় হয়ে ডাক্তার হবে, আমি বাবা হিসেবে ওদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বদা চেষ্টা করব। আপনারা সবাই তাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।  

মনি-মুক্তার সহপাঠীরা জানান, মনি-মুক্তার জন্মদিনে ওরা আমাদের নিমন্ত্রণ করে। আজকে আমরা সবাই একসঙ্গে অনেক গল্প করেছি, হৈচৈ করে আনন্দ করেছি। ওরা অনেক শান্তশিষ্ট, পড়ালেখাতেও খুব ভালো।

দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, মনি ও মুক্তা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারা লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী। কিছুদিন আগে তাদের যাতায়াতের জন্য দুই জনকে দুটি বাই-সাইকেল দিয়েছি। এছাড়াও তাদের লেখাপড়ার জন্য আমি আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। ভবিষ্যতেও তাদের লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করে যাব। আজকে তাদের জন্মদিনে আমি শুভেচ্ছা জানাই এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২২শে আগস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ল্যাম্প হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে জোড়া লাগা অবস্থায় দুই সন্তানের জন্ম দেন জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়ার জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী পাল। শিশু দুটির নাম রাখা হয় মনি ও মুক্তা। মনি-মুক্তাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন তাদের মা-বাবা। পরে রংপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশু মনি ও মুক্তাকে। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তাকে জোড়া লাগানো থেকে আলাদা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।