ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইন জুয়া 

দেশ থেকে রাশিয়ায় পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
দেশ থেকে রাশিয়ায় পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা! গ্রেপ্তার অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীরা

ঢাকা: দেশে অনলাইন জুয়ার দৌরাত্ম্য ক্রমশ বেড়েছে। বিশেষ করে কিশোর-তরুণেরা এই জুয়ার দিকে ঝুঁকছে।

ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই নানান বেটিং সাইটে লগইন হচ্ছে তারা।

জানা গেছে, অনলাইন জুয়ার এসব সাইটের সিংহভাগই রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত। এসব সাইটের মাধ্যমে দেশ থেকে রাশিয়ায় পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা!

সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এরপর এ ধরনের ভয়ংকর তথ্য বের হয়।  

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. রেজাউল করিম (৩১), মো. সৈকত রহমান (৩০), মো. সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো. তৌহিদ হোসেন (২৫) ও মো. জাকির হোসেন (৩৪)।  

অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১টি সিমকার্ড, ল্যাপটপ ৪টি, ডেস্কটপ কম্পিউটার ৭টি, ট্যাব ২টি, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিআইডির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিংকালে অনলাইন প্লাটফর্ম মেল বেট (Mel Bet), ওয়ান এক্স বেট (1x Bet) এবং বেট ওইনার (Bet winner) নামের বেটিং সাইটসমূহ নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে। পরে এই সাইটগুলোর বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত অ্যানালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি টিম গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্টরা এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।  

পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার রেজাউল করিম তার বাসায় ৭ টি কম্পিউটার ও ৪ টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত হন গ্রেপ্তার সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মতো এমএফএস এজেন্ট।  

গ্রেপ্তার নাজমুল, তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজসমূহ নির্বিঘ্নে করতে পারে।

সিআইডির মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান। এই দুজনসহ সৈকত ও রেজাউলের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিমাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পায় এবং জুয়ারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।