ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। পরিচয়পত্রের জন্য ভুল তথ্য দেওয়া, ইচ্ছাকৃত তথ্য বিকৃতি এবং নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য এই আইনে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ নামে বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গত ১২ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিলটি অনুমোদন হয়।

বিলের বিধান অনুযায়ী, আগামীতে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর পাবেন দেশের সব নাগরিক। এ সংক্রান্ত কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি পৃথক ‘নিবন্ধকের কার্যালয়’ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বিলে এনআইডি সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ‘একজন নাগরিককে নিবন্ধক কর্তৃক কেবল একটি জাতীয় পরিচিতি নম্বর প্রদান করা যাইবে, যাহা উক্ত নাগরিকের একক পরিচিতি নম্বর হিসাবে সর্বত্র ব্যবহৃত হইবে। এর অধীন প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ভিত্তিতে একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হইবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্টার থাকিবে। ’

বিলে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাইবার অধিকারী হইবেন। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন নিবন্ধক থাকিবে। নিবন্ধক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবে এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে। নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সকল দায়িত্ব পালন করিবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হইলে নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্তৃক উহা সংশোধন করা যাইবে। ’

বিলে অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। এই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’

আরও বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য এক বৎসর অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’

তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপবাদের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’

বিলে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি তথ্য-উপাত্তে অননুমোদিত প্রবেশ করিলে বা বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’

নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী বা এর প্রতিনিধির অপরাধের জন্য একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত সেবাটি জনগণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। তাই সকল বয়সের নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০’ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে হালনাগাদ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটি নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নাগরিকের নিবন্ধিত হওয়ার এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।